পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেশভাগ ও উত্তরপূর্বের বাঙালির বিপন্নতা

মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির এক এবং প্রধানতম হাতিয়ারটি হল অন্ধবিশ্বাস, আর ভ্রান্তবিশ্বাসের নিবন্ধীকৃত প্রধান রূপটির নাম ধর্ম, সাধারণ মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধতার অবলম্বন ও ভরসার সহজ এক নিত্যকর্ম পদ্ধতি। এক অলীক সুখসমৃদ্ধ পরজন্মের আশ্রয়স্থল। মিশরের প্রাচীন ধর্মের মূল ভিত্তিই ছিল আফটার লাইফ বা পরজীবন কিংবা আসল জীবন যা শুরুই হয় মৃত্যুর পর, নীলনদীর অজানা পারে আছে সেই সব পেয়েছির দেশ। সেই পরজীবনে প্রবেশের জন্য ফারাও রাজাদের কী প্রস্তুতি, ধনরত্ন মণিমুক্তো খাবার দাবার নিয়ে পিরামিড প্রবেশের আয়োজন। পরম্পরাগতভাবে মানুষ ধর্মভীরু আর ধর্মব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী। ছলের পরাক্রমে গোষ্ঠীধর্ম রক্ষায় রাজশক্তি পৃষ্ঠপোষক এবং সহায়ক হয়ে ওঠে। এরাই তৈরি করে জাতি, জাতিরাষ্ট্র, তৈরি করে মানচিত্র এবং তাদের ইচ্ছেমতো ইতিহাসের গতিপথও পরিবর্তিত হয় ভুলপথে।

 ভারত উপমহাদেশেও ১৯০৫-এ প্রথম ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গ হয় ভাগ করে শাসন করার পরাক্রমী শাসক লর্ড কার্জনের রাজত্বকালে। একজাতি বাঙালির সম্মিলিত প্রতিবাদে লর্ড হার্ডিঞ্জের আমলে ১৯১১-তে তা রদ হয়। ৩৬ বছর পর আবার পাকাপাকিভাবে মানচিত্র বদল হয় বাঙালির ১৯৪৭-এ। হয় দেশভাগ, ১৯৭১-এ আবার বাঙালি দ্বিজাতি-তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত করে ঘোষনা করে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের। প্রমাণিত হয় বুদ্ধি ও বিবেকের উপর ধর্ম কখনও স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে না, এও সত্য যে নবীন রাষ্ট্র শত্রু হিসেবেও চিহ্নিত করতে পারে না ধর্মবিশ্বাসকে।

 যেদিন সাধারণ মানুষ ধর্মকে তার প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে সেদিন থেকেই বিভেদ আর দেশভাগের মতো আদিপাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে মানব। একেক সময় মনে হয় থাকুক না যেমন আছে তেমন যার যার অন্ধবিশ্বাস, ওদেশ বাংলা দেশেও দেখেছি শ্লোগান লেখা হয় 'ধর্ম যার যার, উৎসব সবার' এই বাংলায়ও লেখা হচ্ছে ‘ধর্ম আমার ধর্ম তোমার উৎসব সবার’। এরকম জোড়াতালি চলতেই পারে যতদিন না ধর্মব্যবসা চিরতরে বিলুপ্ত হয়। বছর পঁচিশেক আগে ওপার বাংলার বগুড়ার এক প্রখ্যাত মুক্তমনা সাহিত্যিককে বলেছিলাম ওরা কেন ধর্মীয় আচার আচরণ মান্য করে, একটু ঘুরিয়ে সন্তোষজনক জবাব পেয়েছিলাম। ঠিকই তো ফজরের নামাজটা পড়ে বলেই কাকভোরে ওঠে কৃষক, ধর্মাচরণ করে চাষআবাদে যায়, এর চেয়ে উন্নত বিকল্প দিতে না পারলে কেন তার নিত্যকর্মে ব্যাঘাত ঘটানো। খণ্ডযুক্তি হিসেবে মন্দ