পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৪৪

‘কংগ্রেস সরকার জুলুম করে নামাজেতে গুলি করে, ভুটের ঘরে কুড়াল মার।’
‘হিন্দু মুসলমান ভাই ভাই চল দুয়ে মিলে গরু খাই।’

 ভাগের সিলেট থাকল কিছু পূর্ব পাকিস্তানে, কিছু চলে এল কাছাড়ে। সারা দেশ যেমন উদ্বাস্তুর ভাগ বহন করল আসামের ভাগেও থাকল সমহারে। আসামের জন সংখ্যায় বাঙালির নাম খুব একটা কিছু কমল না গণভোট হয়ে। এতেই আবার গোঁসা হয় আসামের জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের।

 ১৯৬০-এ কাছাড়ের কংগ্রেস সভ্য ও বিধায়কের অমতে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস আসামের ভাষা আইনের খসড়া অনুমোদন করে। এবং পরবর্তীতে মন্ত্রসভায়ও গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয় অসমিয়া হবে একমাত্র রাজ্যিক ভাষা সঙ্গে ইংরেজি থাকবে। দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা গোষ্ঠীর প্রতি এই অবিচারের জবাবে কাছাড় জেলার জনতা ভাষা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গর্জে ওঠে। এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদের কর্মসূচি গৃহীত হয়। ত্রিস্তরীয় আন্দোলনের সুচিন্তিত কর্মসূচি। সংকল্প, পদযাত্রা ও সর্বাত্মক হরতাল। নবীন রাষ্ট্রের এক বৃহৎ ভাষা গোষ্ঠীর প্রান্তিকায়িত খণ্ডের তখন মন্ত্র ‘হতে পারি দীন তবু নহি মোরা হীন'। এক মহাজাগরণের উদগীথ উচ্চারিত হয় কাছাড় জেলার গ্রামে গ্রামে পদযাত্রার মাধ্যমে। বলা হয় জান দেব জবান দেব না। উনিশে মে উনিশশো একষট্টির দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে বিনা প্ররোচনায় নিরীহ এবং নিরস্ত্র সত্যাগ্রহীদের উপর গুলি চালানো হয়। এগারোটি তাজা প্রাণ শহীদের মৃত্যুবরণ করে। বাংলাভাষার অমর একাদশ শহীদের রক্তে অর্জিত হয় কিছু অধিকার, কাছাড় ভেঙে ততক্ষণে তিন জেলা হয়েছে কাছাড় হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ। এই নবগঠিত বাংলাভাষী প্রশাসনিক অঞ্চলের নবনাম হয় বরাক উপত্যকা। উপত্যকার জন্য সরকারি ভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায় হয়।

 ছলের কারবারিরা এরপর মোক্ষম আঘাতে বাংলাভাষাকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস পায়। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিজ্ঞাপ্তি করে জানিয়ে দেয় আসামে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মাধ্যমে হবে অসমিয়া ও ইংরেজি। আবার আন্দোলন হয় বরাক উপত্যকায় আবার শহিদ। শহিদের রক্তে আবার অর্জিত হয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শিলচরে। ইতিমধ্যে অসমিয়া ছাত্র সংগঠন আসু আর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা শুরু করে বিদেশি বিতাড়ন আন্দোলন। একসময় হতদ্যোম সমস্ত আন্দোলন যখন স্তিমিত প্রায়, শান্তির বাতাবরণ ব্রহ্মপুত্র বরাক উপত্যকায় বিরাজমান, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শ‍ইকিয়া দৃঢ় হস্তে দমন করছেন নৈরাজ্য। আচমকা তখনই বিনা মেঘে পড়ে বাজ, ১৯৮৫-র ১৫ আগস্ট ভারত দেশের শিশুনায়ক রাজীব গান্ধী এক চুক্তির মাধ্যমে আসুর সমস্ত দাবি মেনে নেন এবং নবপর্যায়ে শুরু হয় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে বাঙালি বিতাড়নের কার্যক্রম, বাঙালি হয় ঘোষিত বিদেশি। নিজবাসভূমে আবার পরবাসী হওয়ার উপক্রম। এখানে বলে রাখা ভালো তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রাজীব গান্ধির মাতামহ