পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৪৬

তাই সুপ্রতিবেশী বাঙালির উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনো মানবিক প্রতিবাদ জানানোর মঞ্চও খুঁজে পাওয়া যায় না।

 ছাত্র সংগঠন আসুর বিগ ভাই অগপ এখন বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী আসামে। রাজশক্তির প্রধান হাতিয়ারই হল বিভাজন, বাঙালিকে বিভাজিত কর, হিন্দু-মুসলমান কৈবর্ত-বর্ণহিন্দু সিলেটি-কাছাড়ি। তাই এখন বদলে গেল জাতীয়তাবাদের কৌশলী মতবাদ। হিন্দুত্ববাদি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাধ্যবাধকতায় যদিও বাঙালি মাত্রেই এখন বিদেশি এবং সন্দেহজনক। তবু তখনকার দৃষ্টিভঙ্গি একপাক ঘুরে গেছে, এখন বাঙালি মুসলমান নিয়ে পূর্বপ্রীতি নিঃশেষ। ওরা তখন ছিল স্নেহের ‘মিয়া, নেলি গহপুর শিলাপাথার চাউলখোয়া মুকালমুয়া ঘুরে এখন গালাগালির ‘মিয়া' শব্দে পর্যবসিত। কবি হাফিজ আহমেদ তার রাগকথা অসমিয়ায় শুনিয়েছেন এরকম,—

‘লেখো
লিখে রাখো
আমি একজন মিয়া
এনআরসি ক্রমিক নং ২০০৫৪৩
দুই সন্তানের বাপ আমি
পরের গ্রীষ্মে জন্ম নেবে আর একজন
তাকেও তুমি ঘেন্না করবে নাকি
যেভাবে আমাকে করো?’

 আর একজন লিখেছেন বাংলায়,

‘আমাগো তোমরা গাইল পার
লাগলে লাথিও মার।
নীরবে কিন্তু আমরা তোমাগ
অট্টালিকা রাস্তা, দালান বানাইতে থাকুম
তোমাগ অস্থির, ঘামে ভিজা, চর্বিযুক্ত
শরীলডারে আমরা কিন্তু রিক্সায় টানতে থাকুম
তোমাগ তাজা সবজি ফলমুল খিলামু
টপাজুরি চরের গাখির, ঘি, সরও খিলামু।’

 অসমিয়া জনজীবন সচল রাখতে, ঘরে ঘরে দৈনন্দিন খাবার পৌঁছে দিতে এই সব মিয়া বাঙালিরাই কিন্তু ভরসা। ওরা কাজ করে নগরে প্রান্তরে।

 এমন কি যে বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্পটি তৈরি হয়েছে গোয়ালপাড়া সীমান্তে তারও মজুর কিন্তু এই বিদেশি তকমাধারী বাঙালি মিয়া।

 মিয়ারাই এখন বড় শত্রু। বিভেদের চিরাচরিত নীতি মেনে বলা হচ্ছে, হিন্দু