পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৪৭

বাঙালিদের সুরক্ষা দেওয়া হবে মিয়াদের নয়। শরিকদল অগপ বলছে মানবে না, তাদের কাছে বাঙালি মানেই বিদেশি, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে। এখন এক অস্থির সময়, কেন্দ্র কিংবা রাজ্য হোক কোনো সরকারই সংবিধানসম্মত কথা বলে না। বিজেপি বললেই যেন হিন্দুকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১৯৫৫-র নাগরিক আইনের সংশোধনী চেয়ে নতুন নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ এখন সংসদের বিচারাধীন। প্রস্তাবিত বিলে মুসলমান ও নাস্তিক ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী যেমন হিন্দু শিখ বৌদ্ধ জৈন পার্শি এবং খ্রিস্টান যারাই আফগানিস্তান বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আগত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবিদার হতে পারবে। দাবিদার হতে পাবরে কিন্তু নাগরিকত্ব পাবে না। এককথায় ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের টোপ ধর্মদেশ হিন্দুস্থানে। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ১৪-র ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিবিরোধী। নতুন নাগরিকত্ব আইন আর রাজীব গান্ধির আসাম চুক্তি আইনের ফারাকটাও কিছুতেই ঘুচছে না। নতুন আইন পুরনোকে খারিজও করছে না। শুধু হিন্দু ভোটারকে দিল্লির মোয়া দেখিয়ে ২০১৯-এর ভোট বৈতরণী পার হওয়া। প্রতিবেশী রাজ্যের এক বাঙালি রাজ্যপালও স্পর্ধাভরে বলে দিলেন এতো কিসের জাত্যভিমান, ওসব ভুলে অসমিয়া ভাষা গ্রহণ করলেই তো পারে আসামের বাঙালি। কী সহজ সমাধান, বাঙালির শত্রু বাঙালি না হইলে কে হইবে।

 সে সব সত্য জানে বিজেপি, জানে বলেই মিথ্যার মতো স্তোকবাক্যে ভুলিয়ে রাখছে বাঙালিকে। এক গৃহযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করেছে, দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে সেনাবাহিনির মহড়া দেওয়ানো হয়েছে। আসামের বাঙালির শঙ্কা সত্য করে কোটি না হোক পঞ্চাশ লক্ষ বাঙালিও যদি নাগরিকত্ব বঞ্চিত হয়, খোঁয়াড়ে পুরে দেওয়া হয় বিনাশের পথে, তার দায় কার উপর বর্তাবে। দেশভাগের কুচক্রীরা তো এখন আর ধরাছোঁয়ায় নেই সুতরাং এসব অতীতমুখি ক্রোধেরও কোনো ভিত্তি নেই।

 এত করেও কিছু হয় না দেখে মরিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদীর দল বাঙালি শায়েস্তা করতে শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করে এনআরসি নবায়ন চক্রান্তে। ভারতবর্ষে কোথাও যা হয় নি, আসামে তাই হয়। আসাম জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নবায়নের নামে আসামের বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দেশহীন নাগরিক করার এক অভিসন্ধির সূত্রপাত হয় রাষ্ট্রশক্তির মদতে। বিদেশি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। ১৯৫১-র নাগরিক পঞ্জিতে যার নাম আছে কিংবা ১৯৬৬-র ভোটার সূচিতে যার নাম আছে কিংবা ১৯৭১-এর ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত যে এদেশের নাগরিক সে-ই বৈধ নাগরিক হিসাবে গ্রাহ্য হবে। এ হল ভিত্তি বর্ষ। ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের নামে রাষ্ট্র অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়ায় দায়দায়িত্ব থাকল না, যুক্তি কয় এরে। চুক্তির পর সব চলছিল যেমন চলে, ঢিমেতালে। বাঙালিও নিশ্চিত ছিল এসব কী মুখের কথা ভেবে। লক্ষ লক্ষ বাঙালি বিতাড়ন কি সম্ভব, কোথায় যাবে এরা। কে নেবে, যেমন আছে তেমনই থাকবে অসমের স্বদেশে। অতিপ্রত্যয়ী ছিল বাঙালি,