পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৫৩

‘লোকে বলে বলে রে, ঘর বাড়ি বালা নায় আমার ।
কি ঘর বানাইলাম আমি শূন্যের মাঝার
... ... ... ... ... ...
হাসন রাজায় বুঝত যদি বাঁচব কতদিন
দালান কোঠা বানাইত করিয়া রঙিন।’

 শাহ আব্দুল করিমের 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান।’ গানের আক্ষেপ প্রাণের বেদনায় ভরপুর। দেশভাগের অনিবার্যতা আর বিভাজনের শক্তিমত্ততা গণভোটের আকারে খণ্ডখণ্ড করে দেয় সিলেটি উপভাষার মিলিত সুর। শান্তিপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করে ধর্মীয় প্ররোচনা। রাজা গৌড় গোবিন্দের হাত থেকে শাসনক্ষমতা তুলে নেওয়ার পর হয়তো নবীন ধর্মপ্রচারের প্রবণতা ছিল। কিন্তু তারপর থেকে সহাবস্থানের এক অননুকরণীয় অপরূপ রূপে সেজেছিল সিলেট। ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আবদ্ধ ছিলেন না বলেই ভাষার চিত্ররূপ ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন স্বরূপে, আবহমানের বাংলা বর্ণমালায়। সিলেটি নাগরিতে লিখিত দইখুরা ফকিরের ‘পহেলা কিতাব’ এ সাধক নিজের ধর্মে অনুগত থেকে লিখেছেন আল্লা খোদার গুণগান কথা, আবার বৃন্দাবন চন্দ্র ও কৃষ্ণ বিলাসিনীর প্রেমকথাও লিখে গেছেন পরম শ্রদ্ধায়। হিন্দু লেখক ভাই গিরিশচন্দ্র লিখিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কোরাণ শরিফ' এর অনুবাদটি এখনও প্রামাণ্য।

 ঐতিহ্যের খণ্ডাংশ দিয়ে হয়তো পরিচিতি গড়ে ওঠে না। আরও অনেক বিখ্যাতজনের দাপটে সমৃদ্ধ হয়েছে বরাক উপত্যকা তথা সিলেটের উপভাষামণ্ডল। সিলেট সবসময়ই রত্নগর্ভা, হয় উত্তম নইলে কিছুই না, কথায় আছে ‘শ্রীহট্টে মধ্যমো নাস্তি।’

 সুরমা গাঙের গাঙচিল উত্তম সিলেটি হেমাঙ্গ বিশ্বাস হারাধন আর জন হেনরির কণ্ঠে বিশ্বাস আর অধিকারের গান শুনিয়েছেন। বাংলা লোকগানের প্রবাদ গায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরি আর হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ঐতিহ্য বহন করে শিলচরে কালিকাপ্রসাদও ওই উপভাষার উত্তরাধিকারী। দোহারের কালিকা কিংবা গণসংগীত ও রবীন্দ্রগানের শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার গানের সঙ্গে সাহিত্যচর্চায় সমান মনোযোগী। শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস প্রণেতা সুজিৎ চৌধুরি ২০০২ এর ৩০ মে 'আজকাল' পত্রিকায় ১৯শে মে নিয়ে একটি প্রতিবেদনে ভাষা আন্দোলনের নির্যাস কম কথায় শুনিয়েছিলেন পাঠককে ‘১৯মে শহিদ দিবস হিসেবে যারা পালন করেন, তাদের কাছে অবশ্যই গুরুত্ব পায় মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার ব্যাপারটা—কারণ বরাক উপত্যকার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ এখনও চলছে। তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক উত্তরণ এবং জাতিসত্তার বিকাশের প্রশ্নটাও গুরুত্ব পাচ্ছে এখন—২১ ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সাফল্য এক্ষেত্রে ১৯শে মে-র দিশারী।’ কালিকাপ্রসাদও আনন্দবাজারে লেখেন ’—উনিশ মে অসম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বহুভাষিক চরিত্রকে রক্ষা করার লড়াই। এক স্বরের সঙ্গে বহুস্বরের