পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভাষাসঙ্গীত

এই উপমহাদেশে বাঙালির মতো নিপীড়িত জাতি আর দুটো নেই। দেশভাগের আগে নিতান্ত সুখেই ছিল বাঙালি, বঙ্গদেশ ছিল বিশাল এক রাজ্য। ভাগ হল পূর্ব পশ্চিমে। পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিমবঙ্গ। চলে গেল আসাম থেকে সিলেটও পাকিস্তানে। পশ্চিমের ভাগও নিয়ে নিল কিছু কিছু বিহার উড়িষ্যা। মানভূমেও আন্দোলন হল ভাষার জন্য। দুভাগ করে পুরুলিয়া জেলা গঠিত হল, পশ্চিমবঙ্গে এল। আসামের সাবেক কাছাড় জেলায় নিরঙ্কুশ বাঙালি। সারা আসামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রচুর বাঙালি, আসাম সরকার ভাষা আইন জারি করল, অসমিয়াই হবে আসামের একমাত্র রাজ্যভাষা । অধুনার বরাক উপত্যকায় তখন যে অভূতপূর্ব গনজাগরণ হয়েছিল ১৯৬১-র উনিশে মে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল ভাষা সংগ্রাম, সেদিনই শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন এগারো জন নিরীহ সত্যাগ্রহী। বরাক উপত্যকার শোকস্তব্ধ জনতা কিন্তু এরপরও সত্যাগ্রহের পথ পরিত্যাগ করেনি, হত্যাকাণ্ডের পর শহিদের শেষকৃত্য সমাপন হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ভোরবেলা শহরের পথ পরিক্রমা হত গান গেয়ে, সেই প্রভাত ফেরির উদ্দীপক গানটি আজও ষাট বছর পরও সমান জোর্তিময় আমাদের কাছে—

শোনো ডাকে ওই একাদশ শহিদেরা ভাই
আর দেরি নয় দেরি নয় দেরি নয়
সুপ্তি ভেঙে পথে ছুটে আয়
হবে জয় হবে জয় আর দেরি নয়
শোনো ডাকে ওই শহিদেরা ভাই
আরও প্রাণ আরও প্রাণ আরও প্রাণ
ওই বেদিমূলে দিতে হবে বলিদান
গাও ভাষাজননীর জয়গান
সে-রক্তধারায় ধুয়ে করো লয়
আর দেরি নয় দেরি নয় দেরি নয়
শোনো পরপার হতে ডাক দিয়ে কয়
একদশ শহিদের দল-
আমাদের শোণিত স্রোতে