পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৫৭ আজ অত্যাচারীর তরী টলোমল একতায় হও সবে বলীয়ান বলো দিব প্রাণ দিব না জবান গাও ভাষাজননীর জয়গান ঘুচিবে সকল পরাজয় হবে জয়। আর দেরি নয়... এই গান গেয়ে উজ্জীবিত বরাক উপত্যকার মাতৃভাষাপ্রেমি মানুষ সেদিন আদায় করেছিল মাতৃভাষার অধিকার, আংশিক হলেও বরাক উপত্যকার জন্য সুরক্ষিত হয়েছিল বাংলা ভাষা, যদিও চোরাগোপ্তা আঘাতে বারবার রক্তাক্ত হয়েছে বরাকের ভাষাজননীর হৃদয়, আরও দুবার কোল খালি হয়েছে দুঃখিনি বর্ণমালার, তিন দুলাল শহিদ হয়েছেন এরপরও। ‘উনিশে মে উনিশো একষট্টি পরে ঘটলেও এর আগে ঘটে গেছে বন্দী বাঙালির নিরঙ্কুশ দুর্গ পূর্ব পাকিস্তানে আর এক মহাবিস্ফোরণ। ১৯৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে। সেদিনও ছিল সাধারণ ধর্মঘট, সেদিন ছিল রাষ্ট্রভাষা দিবস উদযাপন। সেদিনই শহিদ হন সালাম রফিক বরকত জব্বার সহ নামহীন অনেক। একুশে ফেব্রুয়ারিও একদিনে হয় নি, দেশভাগ করে পূর্ববাংলাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের লেজুড় করে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের ভাষাকে ওরা জুড়তে চেয়েছিল ধর্মের সঙ্গে, ১৯৪৮-এ পাকিস্তান পার্লামেন্টে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার কথা ঘোষিত হয়, প্রায় ষাট শতাংশ বাঙালির মুখের ভাষা উপেক্ষা করে। বিক্ষোভ চলছিল অনেক আগে থেকেই, পাকিস্তান গণ পরিষদে সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবী প্রথম উত্থাপন করেন বীরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু জিন্না ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জানিয়ে দেন উর্দু একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা অন্য কোনো ভাষা নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলেও তিনি এই কথা বলেন। কেমন মিলে যাচ্ছে না আসামের সঙ্গে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানও একই কথা বলেন, আর রাষ্ট্রপ্রধান খাজা নাজিমুদ্দিনও বীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। যদিও মাঝে মধ্যে কিছু উদ্ভট কথাও শোনানো হয়, নাকি বাংলা লিখতে হবে আরবি হরফে। এরমধ্যে খাজা ঢাকার পল্টন ময়দানে এসে জিন্নার কথার পুনরুক্তি করেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত বাঙালির দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। শেষ পর্যন্ত অনড় সরকারকে ধাক্কা দিতে ২১ ফেব্রুয়ারির সংগ্রামের কর্মসূচি গৃহীত হয়। সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে ২০ ফেব্রুয়ারির রাতে দমনের হাতিয়ার হিসেবে। কিন্তু গণজাগরণ কি কোনো সরকারি ফতোয়া মান্য করে কিংবা করেছে কখনও। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল করে বের হয় রাজপথে আর তখনই এক কিশোর সহ