পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একমুঠো দুরণ ফুল

বনাম শব্দে একটা লড়াই লড়াই গন্ধ থাকে। আর, শিষ্ট চলিত বনাম মান্য আঞ্চলিক উপভাষা ইত্যাকার তাত্ত্বিক শব্দাবলী হলে তো কথাই নেই। কথাযুদ্ধের আর শেষ নেই। ঠাণ্ডা লড়াই চলতেই থাকে। হ্যাঁ, শিষ্ট চলিত ভাষার সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষার একটা অভিমান থাকে। দুম করে কেউ সুয়োরাণী হয়ে গেলে কষ্ট হয়। উপেক্ষিত প্রান্তিকের অভিমানে ডালপালা ছড়ায়। সামাজিক অসাম্যের কেন্দ্র হয় দিকে দিকে। রাজনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয় অঞ্চল বিশেষে। হয়তো অশিক্ষা এবং ঈর্ষাজনিত কারণেই মুখের ভাষাকে উচিত শিক্ষা দিতে অস্ত্রের ভাষা প্রতিযোগী হয়। এক উপভাষার সার্বভৌমত্ব মেনে নিলেই তো আর দুয়োরাণীর দুঃখ ঘুচবে না। একই ভাষাগোষ্ঠীর গণদেবতা লড়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার লড়াই। পশ্চিম বাংলায় ঝাড়খণ্ডী, উত্তরবঙ্গে কামরূপী উপভাষা, কামতাপুরী, রাজবংশী, রাভারা লড়ছে।

 বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক উপভাষা নিয়েও একটা উপেক্ষার যন্ত্রণা আছে। অপরিচিত এক কথ্যভাষা হয়েই থেকে গেল আঞ্চলিক উপভাষাটি। কোথাও কোনো মান্যতা নেই মূল ভাষাপ্রবাহের। দু-জন মানুষ হেঁটে গেলে পরিচয় হয় এরকম, একজন বাঙালি আর একজন কাছাড়ি (সাবেক বরাক উপত্যকার একটিই জেলা ছিল কাছাড়, সেই কাছাড়বাসী বাঙালিদেরও বলা হতো কাছাড়ি।) হয়তো এত সহজও নয় অভিযোগের মাত্রা। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, কার সঙ্গে লড়াই, কার বিরুদ্ধে অভিযোগ। ঘরে বাইরে দু-দিক থেকে আক্রান্ত বরাক উপত্যকার বাঙালির মুখের ভাষা, আঞ্চলিক উপভাষা মুখ্যত।

 মূল ভূখণ্ড বলে প্রচলিত কলকাতার কথা, কিংবা দ্বিতীয় বলে প্রচলিত ঢাকার কথা বাদ দিতেই হয়, কারণ এককালের ভাষাঘরে এখন আর ঘর নেই তেমন, ঘরের আভাস আছে হয়তো। শুধু মাটির বাড়িটাই তো বাড়ি নয়, পুকুর ঘেরা বাগান, বিস্তীর্ণ উঠোন, দাওয়া, সব মিলিয়েই যে ভদ্রাসন এপার বাংলা, ওপার বাংলায় এখন শুধু চরভূমিটাই বর্তমান, সীমান্ত সামলাতেই ব্যস্ত দু-পারে। মান্য লেখাভুবন জোড়া এখন শুধু নির্জলা খরাকাল।

 তাই, সময় হয়েছে নিকট এখন, বাংলার ভাষাপতাকায় সুজলা সুফলা বরাক উপত্যকার নাম লিখে উড়িয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। ওরা যে যা বলুক, বরাক উপত্যকার সমৃদ্ধ উপভাষার জাদু ইতিমধ্যে ছড়িয়েও পড়েছে সম্পূর্ণ ভাষাভুবনে। তাই, বিরোধ কোথাও নেই, খটকা শুধু মান্যতা নিয়ে। যে-মান্যতা ভাষাতাত্ত্বিক নয়,