পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৬১

পরিচয়ের মান্যতাকে চোখঠারার দিন শেষ হয়ে এল। তাই, উপভাষার এই বনাম কথায় বরাক উপত্যকাই প্রধান প্রতিযোগী। এই ভুবনে আলো জ্বেলে, এই পথেই...।

 সাহিত্যের ভাষা, লেখালেখির ভাষা বলতে যে-আদর্শ আঞ্চলিক উপভাষাকে গ্রহণ করেছে বাংলা, তার বাইরের অঞ্চল প্রধানরাও, শুধু কথা বলার বেগার খাটতে বসে নেই। আঞ্চলিক ভাষার কথা এবং লেখার বিভিন্নতাই ভাষাভুবনকে সমৃদ্ধ করে। প্রসারিত করে। বরাক উপত্যকার তরুণ ভাষাবিদ ও ভাষাতাত্ত্বিক শ্রী জগন্নাথ চক্রবর্তী ‘বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধান ও ভাষাতত্ত্ব’ নামের সুবিশাল বই প্রণয়ন করে সেই সত্য প্রমাণিত করেছেন। সেই বই-এর ভূমিকা লেখক শ্রদ্ধেয় পবিত্র সরকার কিন্তু অন্য আঞ্চলিক উপভাষাকে লেখায় মান্যতা দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘একটু ছাড় দেওয়া যায় নাটকে, নাটকের ভাষায় ব্যবহৃত হতে পারে, উপন্যাসের সংলাপেও ব্যবহার হতে পারে।’ কিন্তু সেখানেও সংশয়, লিখছেন, ‘যেমন বরাক উপত্যকার বাংলাও চমৎকার ব্যবহার করেছেন তীর্থঙ্কর চন্দ তার একাধিক নাটকে। কিন্তু নাটক যেহেতু অধিকাংশ দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যম, তা বিশেষ এলাকার প্রান্তস্থিত উপভাষায় লেখা হলে অন্য এলাকার শ্রোতা-দর্শকদের কাছে তার রসগ্রহণে ব্যাঘাত তৈরি হয়।’ এ কেমন কথা, ‘চমৎকার’ বলেও ‘ব্যাঘাত’-এর কথা। স্ববিরোধ কেন। আবার আদর্শ বাংলার স্বপক্ষের যুক্তিটাও বেশ শক্তপোক্ত, যেমন, তবে প্রয়াত কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর মতো কবি এবং তপোধীর ভট্টাচার্যের মতো প্রাবন্ধিক যে উপভাষায় কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন তা বাংলার মান্য উপভাষা, তা যে-কোনো বাংলাভাষীর কাছে পাঠযোগ্য।” তবে পাঠক বিভ্রান্ত হওয়ার পক্ষে এই দুফলা যুক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয় স্বতঃসিদ্ধ উপস্থাপনে কোন উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। অনাচারিক আঞ্চলিক উপভাষা শুধু কথাই বলে যাবে। তাহলে, ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গান কোথায় দাঁড়ায়। আঞ্চলিক উপভাষার অনাচারিক রূপ শুধু। গীতিকা তো গান নয়, সমৃদ্ধ সাহিত্যও বটে।

 মেনে নেওয়া যাক, সাহিত্যে বর্ণনার ভাষা হবে লেখার ভাষা। মানে, কথ্য ও লেখ্য মান্য উপভাষা। এখানেও দেখা যায় পক্ষপাত, বাংলার অন্য সমাজভাষা, যেমন, রাঢ়ী, বরেন্দ্রী, কিছু কামরূপীও যা উত্তরবঙ্গের কথ্যভাষাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে সংলাপে, ‘রসগ্রহণে ব্যাঘাত হয়নি কোথাও’। এক কৃত্রিম উপেক্ষার ‘ব্যাঘাত’ দিয়ে ওপারের সিলেটি আর এপারের বরাক উপত্যকার আঞ্চলিক উপভাষাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক রাষ্ট্রসীমার বাইরে বলে কি। নাকি, ভৌগোলিক দূরত্বের অচেনা। তবে, দাবায়ে রাখতে পারবা না। দাবিয়ে রাখা যায়নি। ওপার সিলেটির এক কবি ও ঔপন্যাসিক মুজিব ইরম, কবিতা লিখছেন আঞ্চলিক উপভাষা সিলেটিতে, উপন্যাসের বর্ণনা থেকে সংলাপ পর্যন্ত লিখছেন সিলেটিতে। কব্জির জোর আছে বলে পেরেছেন। তবে এও ঠিক, মান্যভাষার লেখ্যরূপকে শিষ্টতার আধার দেওয়া হয় বানান ও