পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৬৩

পন্থা। কথায় আছে, কলকাতায় ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হলে, শিলচর, আগরতলা, গুয়াহাটিতে বর্ষাতি কেনার ধুম পড়ে যায়। কলকাতার কাছাকাছি বলে, পুরুলিয়া, কাটোয়া, দখনো, রাঢ়, মেদিনীপুরের কথ্যভাষা, মূলভাষার বর্ণনা ও সংলাপে ঢুকে যায় অবলীলায়, কিন্তু তীর্থঙ্কর চন্দর নাটক, ছোটগল্প থাকে 'অন ওয়েটে’। তীর্থঙ্করের ভাষাও তো বাংলাই। একই ভাষাসন্তানের মাতৃদুগ্ধ।

 দুই, বাংলা ভাষা-পরিবারের সমৃদ্ধ সদস্য, বরাক উপত্যকার, ত্রিপুরা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলাভাষী লেখকের মুখের ভাষায় তো আর কলম চলে না তরতরিয়ে গঙ্গাজলের মতো! উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা উপভাষার লেখককে, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র, জিয়াভরলির ডিঙা বেয়ে পৌঁছতে হয় মূল স্রোতে। এও এক প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় লেখকের লেখামুখ ব্যাহত হয় কিছুটা। মুখের ভাষা সরাসরি নামে না কলমের ডগায়। লেখার ভাষায় তর্জমা হয়। এই পরিশীলনে, পুনর্নির্মাণে, মূল চিন্তাস্রোত কিছুটা ব্যাহত হয়। কথার আর লেখার ভাষা এক হলে যা হয় না।

 তিন, দুর্বলতার কথা। কৌতুকের কথা। শ্যামবাজারের বিখ্যাত ‘শ’ কথা যেমন আছে কলকাত্তাই বুলিতে, বরাক উপত্যকারও আছে ‘ফাগল’ কথা। সে থাক, কথ্য ভাষাপুষ্পের বিভিন্নতা দিয়েই তো মূলভাষার স্তবক। সে থাকবে। কিন্তু লেখার ভাষায় যদি অনুপ্রবেশ ঘটে পাগল শশীবাবুর। সে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে দরকার ভাষা শিক্ষার। বিদ্যায়তনে বাংলা পঠনের আয়োজনে বিদ্যাসাগর থেকে পবিত্র সরকার, সবাই তো আছেন। পদ্ধতিগত কোনো ত্রুটির জন্যই কি শিক্ষা সম্পূর্ণ হচ্ছে না। বিস্তর ভুল সাইনবোর্ড লেখা হচ্ছে, ভুল বাংলায় ইস্তাহার ছাপা হচ্ছে, খবরের কাগজে বানানের নৈরাজ্য চলছে। কথার ভাষায়, লেখার ভাষায় ঠোকাঠুকি চলছে।

 তাই, বনাম নয়, লড়াই নয়। ভাষাশিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেই আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে আঞ্চলিক উপভাষা এবং মূল ভাষাপ্রবাহেরও গতি হবে অবিরত। ভাষাফুলের জলসায় ঢাকা কলকাতার ডালিয়া, জিনিয়া, রজনীগন্ধার পাশে বরাক উপত্যকার একমুঠো ‘দুরন’ ফুলও তখন হয়ে উঠবে বন্ধনীমুক্ত ছুটি পাওয়া নটী।

দ্বিরালাপ ৩৬। ফেব্রুয়ারি ২০১০