পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কিল কথা

তখন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর চলচ্চিত্রজীবনী দেখানো হত ফিল্ম ডিভিজনের অস্থায়ী পর্দায়। গ্রামে গ্রামে প্রজেক্টার লাগিয়ে দেখানো হত গমগমে কণ্ঠস্বরের এক আঞ্চলিক ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠে বাংলায়। দেখানো হত তাঁর দীর্ঘাঙ্গ, ঈষৎ ঝুঁকে হাঁটার ভঙ্গি, ছায়াছবি শেষ করা হত তাঁর প্রিয় কবিতার পঙ্‌ক্তি কবি রবার্ট ফ্রস্টের ‘এণ্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ’ দিয়ে। গ্রাম দেশে তখন আর কোথায় উত্তমকুমার অশোককুমার দিলীপকুমার, তখন তিনিই হিরো, দেশ দেশ ভাব যে দেশভাগের ক্ষতে। কত রকমের ফুলঝুরি উড়তো আকাশে, আকাশ থেকে জাতীয় পতাকা নেমে আসতো আলোর মালায়। প্রধানমন্ত্রীর ডকুমেণ্টারি জুড়ে থাকতেন তীক্ষ্ণ নাসা এক সুন্দরী, তাঁর কন্যা প্রিয়দর্শিনী। আর থাকত সঞ্জীব রাজীব নামের দুই শিশুর হুটোপুটিও। সঞ্জীবই তো জানতাম, নাকি বড় ভাই রাজীবের সঙ্গে মিলিয়ে সঞ্জয় হয়ে গেছিল সঞ্জীব। শৈশবের সবকথা কি মনে থাকে হুবহু। তখনও বেঝার মতো বয়স হয়নি, যে প্রধানমন্ত্রীর নাতির নাম সঞ্জীব না হয়ে সঞ্জয় হলে আমাদের কী। আমাদের মাটির বাড়ি তো আর রাজপ্রাসাদ হয়ে যাবে না। তখনও বুঝতে পারিনি যে কল্পলোকের রাজপুত্রদের শৈশব দেখিয়ে আমাদের শিশুকালটাকে নিলাম করে দেওয়া হচ্ছে সস্তাদরে। তখন একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল গাঁয়ে গঞ্জে ‘দিল্লিকা লাড্ডু যো খায়া ওভি পস্তায়া যো নাহি খায়া ও ভি পস্তায়া’। দিল্লিতে অনেক রকম যন্তর মন্তর মিনার মন্দির মসজিদ গুরুদ্বার তিনমূর্তি বাড়ি। সেই ভবনে থাকেন পণ্ডিত প্রধানমন্ত্রী। আবেগ আর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করাটাই প্রধান বলে নেতারা হয়তো কোনো কালে বুঝতেই পারেন না গড্ডালিকা প্রবাহ কী চায়। কালস্রোতের ধারা কোন খাতে বইবে, মানবতার অপমান কোন চূড়ান্তে পৌঁছবে, স্বদেশকে বিদেশ করে বন্দী শিবিরের নামে খোঁয়াড়ে রাখা হবে দেশের নাগরিককে। শুধু দেশের নাগরিক নয়, দেশনায়ক প্রথম প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন স্বজন, তার মানে তিনি জানতেন তাঁর দূরদর্শী দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল সত্যের মুখ বুঝতে পেরেছিলেন মূল স্রোতে ফিরতে চাইবেন ফেলে আসা দেশবাসী তাই দেশভাগের অব্যবহিত পরে কুম্ভীরাশ্রুর স্রোতে ভেসে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ওপারে আমাদের যে স্বজনরা রইলেন তাদের জন্য আমাদের দুয়ার খোলা রইল।’ দেশ ভাগ হয়েছিল পূর্বে পশ্চিমে, পাঞ্জাব ভেঙে দুভাগ হলেও যোদ্ধার জাত ওসব জলহীন দৃষ্টির ভারি কণ্ঠস্বরের আবেগে ভুলে নি। কেউ ছেড়ে এসেছে প্রিয় শহর লাহোর কেউ বা পাটিয়ালা জলন্ধর