পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৬৭

ছেড়ে চলে গেছে। জয়ের নেশায় যতজন এসেছে তাঁর থেকে বেশি ফেরত পাঠিয়েছে। যদিও বিখ্যাত উর্দু লেখক বলেছেন, ‘ক্ষত হয়তো শুকিয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে কিন্তু মানসিক আঘাত শুকোবার নয়।’ তবুও এপার ওপার পাঞ্জাবিদের ক্ষতে শুধুই স্বভূমি হারনোর বেদনা। আর এপারে পূর্বদেশের শিয়ালদহে উত্তরপূর্বের মহিষাসন ও ইতিউতি সীমান্ত স্টেশন সীমারেখা ও সীমানদী লঙ্ঘন করে লাখে লাখে এসেছে পোকায় খাওয়া ভাগের দেশে। শুধুই প্রবেশ উল্টো সংখ্যাটা নিতান্তই নগণ্য। এপারে ওপারে সৃষ্টি হল নতুন জাতির, যার নাম সংখ্যালঘু। ওপারে যারা সংখ্যালঘু হয়ে স্বাভাবিক উৎপীড়নের শিকার হতে হতে রয়ে গেলেন এপারের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে জানলেন হিন্দুস্থানের দেশের নায়ক তাদের জন্য দরজা খুলে রেখেছেন, তখন আর ভয় কাকে। এবার আগে আর স্বার্থান্বেষী নেতাদের দেশভাগে যারা ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এলেন কাতারে কাতারে লাখে লাখে, তারা কে, কী তাদের পরিচয়, কোথায় হবে তাদের বাসস্থান। এসব ভাবা হয় নি। নতুন ইহুদিদের জন্য খোলা হল দরমার বেড়া আর শন নেরার ছাউনি দেওয়া শিবির, চাল ডাল নুন ডোলের নগদেরও ব্যবস্থা হল। পুনর্বাসনের নামে ভারতের খরা প্রবণ এলাকাগুলিকে বেছে নেওয়া হল দ্রাঘিমা রেখার উপর, পুনর্বাসনের নামে বন্দীজীবন বরাদ্দ হল নতুন করে। এদিকে তিব্বতিদের দল যখন চলে এলেন দলাই লামার সঙ্গে, তাদের জন্য ব্যবস্থা হল পাঁচতারা স্বাচ্ছন্দ্য, হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালাকে বানিয়ে দেওয়া হল স্বর্গপুরী, নতুন তিব্বত হল ভারতবর্ষে। বাঙালি কিন্তু একটা সিলেট নোয়াখালি চট্টগ্রাম ঢাকা কিংবা বরিশাল ময়মনসিংহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া গড়তে পারল না ভাগের দেশে। পাঁচতারা ধর্মশালার বিপরীতে বাঙালিকে মধ্যপ্রদেশের দণ্ডকারণ্যের বনে, উড়িষ্যার বিহার কর্ণাটক মুম্বাইয়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুনর্বাসনের নামে খোঁয়াড়জাত করা হল। কলকাতা শিলিগুড়ি বর্ধমানের শাকপাতা কচুর লতি ধ্বংস করে উদ্বাস্তু বাঙালি দখল নিল জবরদখল কলোনিগুলিতে, শেষ পেরেকটি গাঁথা হল সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি কেলেঙ্কারিতে যখন মুখ পুড়ল সাম্যবাদী সরকারের। শুধু নতুন দিল্লির ইপিডিপি কলোনির চাকচিক্যে ঢাকা পড়ে থাকল বাঙালির বিপন্ন অস্তিত্ব। এদিকে আসামেও অকারণে লড়িয়ে দেওয়া, খুঁচিয়ে পচা ঘা করা হল পুরনো ক্ষতের। বলা হল বাঙালি থাকলে অসমিয়া জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, তাই আসাম শরীর থেকে চক্রান্ত করে সিলেট হেঁটে দেওয়া হল, ওদিকে রংপুর জেলার বৃহদংশের অসমীয়া করণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ভাজন আসামের প্রথম মুখ্যমন্ত্রীও বললেন, আসাম অসমীয়ার’ দেশের বৃদ্ধ বিবেক নাকি তখন বলেছিলেন ‘তাই যদি হয়, ভারত তবে কার?’ দেশ যখন ভাগ হয় ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাতি দুজনের বয়স তখন তিন আর এক। চুয়াল্লিশ আর ছেচল্লিশে জন্ম। বৈষম্যের ট্র্যাডিশন সমানে চলছে বাঙালির প্রতি অবিচার বাড়াতে দেশনায়করা আঞ্চলিক মোড়লরা ভুলে যান ভারতীয়তা, শক হুন ভোটবর্মি পারসিকদের এক দেহে লীন হওয়ার ঐতিহ্য। ভুলে যান পিতৃসূত্রে