পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৬৯

তারা তো নিশ্চিন্ত তাদের আছে অশ্রুসজল রাজকীয় পাঞ্জা, প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জীবনব্যাপী মৌখিক নির্ভরপত্র। তারা বুঝতেও পারেন নি যে স্বাভাবিক ভারতীয় নাগরিকত্বের আশ্বাসও ছিল ভুয়ো। কথিত আছে পদ্মবিভূষণ চালিহা তাঁর রাজত্বকালে তিনলাখ বাঙালি তাড়িয়েছেন। তারপর শুরু হয় কুখ্যাত আসাম আন্দোলন। বিদেশি খেদা আন্দোলনের নামে স্বদেশি বাঙালি বিতাড়নের এক অভিনব রোষের আক্রোশ। রাজ্যটাকেই কিছু নেতৃত্বলোভী স্বার্থান্বেষীর উৎপাতে স্তব্ধ করে দেওয়া হল। সেইবিরাম সময়ের মুখ্যমন্ত্রী তো রাজধর্ম পালন করেছিলেন, কড়া হাতে মোকাবিলাকরেছিলেন উগ্রজাতীয়তাবাদী আন্দোলন। তখন কে জানত, প্রথম প্রধানমন্ত্রীর কন্যা প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হবে আততায়ীর গুলিতে,আর বাঙালির কপাল পুড়বে স্থায়ীভাবে। মৃত প্রধানমন্ত্রীর সুপুত্র চুয়াল্লিশে জন্ম যার, প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র ভারতের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে। শিশুনায়ক মসনদে বসেই ঘোষণা করলেন স্বদেশীর ঢালাও নাগরিকত্ব দেওয়া যাবে না আসামে দোর্দণ্ড প্রতাপ গনিখান চৌধুরী অজিত পাঁজা তখন তাঁর মন্ত্রী। কেউ রা টি কাড়লেন না। হয়ে গেল আসাম সমঝোতা। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্নকে কাট অফ করে নিয়ে ১৯৫১-র নাগরিক পঞ্জির ভিত্তিতে নির্ধারিত হল নাগরিকত্ব। সই করলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, ছাত্রনেতা আর জাতীয়তাবাদী নেতা। তারপর জাতীয়তাবাদের জোয়ারে ভেসে গেল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, ছাত্রনেতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ মন্ত্রী। ক্ষমতা আর দুর্নীতি নিয়ে বেশ তো চলল কিছুদিন। বিদেশি বিতাড়নের উচ্চবাচ্য হল না ক্ষমতায়নের ফলে, এই ফাঁকে, ঝোপ বুঝে কোপ মারতে তৎপর হল আসাম সমঝোতার দুবছর আগের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনি। আলফার তাণ্ডব চলে পাঁচ সাত বছর। সেই সময়কাল ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি অসমিয়া সবার কাছেই চরম সংকটের সময়, দহন বেলা। আবার এক ছাত্র নেতা ঝোপে কোপ মারার রাজনীতি করলেন, উচ্চতম বিচারালয়ে স্বজাতি এক বিচারপতির এজলাসে দরখাস্ত করলেন ১৯৮৩-র আইএমডিটি আক্ট বাতিলের সুপারিশ করে। সেই অ্যাক্ট অনুযায়ী বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হত। ২০০৫ সালে সেই আইনটি বাতিল হয়ে যায়। পুরনো আইন অনুযায়ী চিহ্নিত অনুপ্রবেশকারীর কোনো দায়দায়িত্ব ছিল না তার নাগরিকত্ব প্রমাণ করার। এবার ঠিক হল উল্টো পথে চলবে আইন, রাষ্ট্র ঠিক করবে কে অনুপ্রবেশকারি বিদেশি, আর তকমাদাগা বাঙালিকেই প্রমাণ করতে হবে সে তা নয়। আশ্চর্য এই দেশ আর তার বিচার ব্যবস্থা, আসামে একজন ছিলেন লাচিত বরফুকন মোগলের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন আর একজন এই ছাত্রনেতা বাঙালি বিজয়ের পর এখন আসামের মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে উচ্চতম ন্যায়লয়ের নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে ২০১৩-য় জন্ম হয় এক দৈত্যের। যার নাম এনআরসি, ন্যাশনেল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স, শুধু আসামের জন্য জাতীয় নাগরিক সুচি। সেই দৈত্য এখন পর্যন্ত চল্লিশ লক্ষ বাঙালিকে গ্রাস করেছে, বলির নিমিত্ত