পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রূপকথার তৃতীয় ভুবন

আবার ইঁদুরের উপদ্রব।

 ইঁদুর তো নয়, ধেড়ে গন্ধছুঁচো। রান্নাঘরের পাইপ বেয়ে দোতলায় উঠে খেয়ে যায় এঁটোকাঁটা আবর্জনা, দুর্গন্ধের মধ্যে ছড়িয়ে যায় এক বিভ্রান্তির রহস্য। মোহকারী এক সুবাস। রূপকথার থার্ড বাইলেন-এ এমন ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিকের।

 থার্ড বাইলেন এর ঘটনা, মানে তৃতীয় উপপথের।

 মহাসড়ক নয়, রাজসড়কও নয়, গলির গলি তস্যগলি, যার নাম কানাপথ। তেমনি এক প্রান্তিক গলিতে হামলা হয় প্রায়শ। ফার্স্ট সেকেণ্ড-এর গেরস্তরা এখন বেশ চালাক চতুর, লোহার জালি লাগিয়ে রাখে পাইপের মুখে। তৃতীয় উপসড়কের বোকা বাসিন্দা এখনও বসুধার সবাইকে কুটুম ডাকতে ভালবাসে, ষাঁড়ের গুঁতো খেতে বলদকেই ডাকে। তাই পাইপের মুখেও বসায়নি কোনো পাহারা।

 অন্যের ভাঁড়ারে এসে টাইম পাস করে যাওয়া গন্ধ ইঁদুরকে নিয়ে এক ছোটোগল্প লেখা হয়েছিল বরাক উপত্যকায়। হাসি ঠাট্টায় সেদ্ধ করে পরিবেশিত হয়েছিল সত্য, ম্যাজিক ফ্যাজিকও ছিল। পশ্চিম দেশে এক ধর্মীয় উৎসবে নাকি এসব হয়, হাসি ঠাট্টা ভাঁড়ামি দিয়ে জমিয়ে দেওয়া হয় উৎসেবর আনন্দ, বলা হয় কার্নিভ্যাল। গল্প উপন্যাসে তেমন আড়াল না নিয়ে সত্য কথা কী করে বলবে লেখক; মানীর মানহানি করলে যে শক্তিধরের আইন বলে কলম বিক্রিই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সে-গল্পের নাম ‘রূপকথার থার্ড বাইলেন’।

 শিবের গীত তো গাওয়া হচ্ছে সেই কোন আদ্যিকাল থেকে, তাই ব্যতিক্রম কিছু হলো না। দুর্বোধ্য গানের ভূমিকা দিয়েই যখন শুরু হলো তখন কিছু প্রয়োজনীয় স্পষ্টীকরণ দিয়ে বিষয়ে যাওয়াই ভালো।

 ইঁদুর অনুপ্রবেশে কিন্তু কোনো ভুবনের গল্প নেই, বরং ভুবন বিকৃতির কথা আছে, তাই তৃতীয় নেই থার্ড আছে, পথ নেই, সড়ক নেই, লেনও নেই, আছে বাইলেন। আর বাংলার ভাষা ভুবনও এত পরিসরহীন ঘিঞ্জিও নয় যে ঢুকে যাবে বাইলেন-এ। ভাষার ভুবন আছে ভুবনেই। ধর্মোন্মাদ কিছু বাঙালির ইচ্ছায় ভাষাভুবন দু-ভাগ হয়েছিল কোনও কালে। অনাদরের এক তৃতীয় ভাগও গড়ে উঠেছিল বরাক উপত্যকায় তখন, মান্যতাহীন এই ভাষাভুবনকে কেউ কেউ ঔপনিবেশিক ছিটমহলও বলেন, কেউ তাও বলেন না, নামও শোনেননি যে। না শোনাই ভাল, এসব আপাত-বিভাগে বিশ্বাস না করাই ভাল, কারণ মানুষের ভাষাপৃথিবী কখনো খণ্ডিত হয় না। তাই, বাংলার ভাষাভুবনও এক এবং অখণ্ড।