পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ৭৪ কিন্তু ধন্দ হয় গলিপথ নিয়ে, আর গলির বাসিন্দাদের নিয়ে। মনের বিত্তে উচ্চ না হলেও রাজারাজড়ার মতো প্রভুত্বকামী প্রথম গলির বাসিন্দার অল্পে সুখ হয় না। মিনি মাগনায় যে প্লট পাওয়া যায় চাঁদের জমিতে। না না, চাঁদের কথাটা নিতান্তই উপমা ৷ আসলে, একটা গলি, পেরিয়ে গেলে যে দুর্গম থার্ড বাইলেন, ওখানে আছে বিস্তীর্ণ প্রান্তর, রোদ মহাশয় ওখানে যেমন ইচ্ছে ঝিকিমিকি খেলতে বেরোন ভোরের বেলা, ফার্স্টগলির ইটকাঠের চৌকো জ্যামিতিক ছায়া বেশি, আলো কমের ধমক নয়, শুধু কি প্রান্তর। আছে পাহাড়, নদী, নৌকো আর সত্যি মাছের রাজ্যপাট হাওর বিলে। ফার্স্ট হওয়ার হ্যাপা পোয়াতে পোয়াতে জেরবার, ভিড়ে ভিড়াক্কার, সবাই প্রথম হতে চায় । প্রথম লেনের বার, পাব এমন কী খালাসিটোলাও ইদানীং বড় আক্রা, রেস্ত কুলোয় না, নির্জনতাও নেই। থার্ড গলির নদীটাও বড় একলা সুন্দরী, নদীর পারে ‘তেতই' না 'বরই' কী যেন বলে এক গাছের নিচে কেমন মিনি পয়সায় বসিয়ে দেওয়া যায় বাংলার ঠেক। কেউ করেনি মানা। ‘বাংলা' শব্দের নেশায় তো বাংলাই সমৃদ্ধ হয়। বাড়ির লোক গলির লোকও কেউ নেই দেখতে আসার। এত দুর্গম যে বললে কেউ বিশ্বাসই করবে না থার্ড বাইলেনের অস্তিত্ব। তাই বলেন, এখানে একটা স্থায়ী কেন্দ্র হোক, বিলিতি খেয়ে অভ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে, এই বাংলায় কেমন একটা মুগ্ধকারী অ্যারোমা আছে। আসব, বারবার আসব। প্রথম গলির রাজনীতির মতো সাহিত্যও করা যায় নেশা চড়লে, বলা যায়, আমরা ‘বসন্তের কোকিল' নই, আমরা ‘ডুমুরের ফুল'ও নই। বিগলিত থার্ড বাইলেন বাসিন্দাদের তো আর হারিয়ে যাওয়ার কিছু নেই, তাই বিসর্জনও নেই, সদাই আবাহন। প্রথম পক্ষের ভাঁড়ারে কম পড়লেই তাই নর্দমার পাইপ বেয়ে চলে যাওয়া যায় অরক্ষিত পুরীতে। বাংলা ভাষার তৃতীয় ভুবন বরাক উপত্যকা। এখানে কিছুই অরক্ষিত নয়। বাংলা ভাষাকে সুরক্ষিত রাখতে উনিশ শো একষট্টির উনিশে মে এগারোজন ভাই বোন আত্মত্যাগ করেছে এই ভুবনে । এরপরেও বারেবারে ঘটেছে আত্মত্যাগের ঘটনা, ঘটেই চলেছে। কই, গর্বিত প্রথম ভুবন থেকে তো কেউ কোনোদিন বলেন নি, যাই উনিশে মে, দিয়ে আসি এক মুঠো ফুল। যেমন যাই নগ্ন পদে, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ভোরে, ঢাকায়। এবার কলকাতায় উনিশে মে উদ্যাপিত হয়েছে আঠেরোই মে, এক অখ্যাত প্রেক্ষাগৃহে। উদ্যোক্তারা সবাই ভাষাপ্রেমী। পরদিন, মানে উনিশে মে দিবসেই আমাদের উপত্যকারই এক সাংবাদিক সাহিত্যিক ও চিত্রকরের উদ্যোগে উদ্যাপিত হলো সাড়ম্বরে, কিন্তু কেন ভাই, এক জুতো-ব্যবসায়ীর ছবি সামনে রেখে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে কেন উনিশে মে উদযাপন। আমাদের উপত্যকার তিন বিখ্যাত কবি কবিতা পাঠ করলেন। আঠেরো এবং উনিশ দু-দিনই উপস্থিত ছিলেন আমাদের পরম প্রিয় অমিতাভ চৌধুরি ও দোহারের কালিকা প্রসাদ। দু-দিনেই কালিকা প্রসাদ শিলচর রেলস্টেশনের নাম ভাষাশহিদের নামে করার জন্য জনমত প্রভাবিত করেন, অমিতাভ চৌধুরি স্মৃতিচারণে ফিরিয়ে নিয়ে যান একষট্টির উনিশে মে। আপাতদৃষ্টিতে অশ্রদ্ধার