পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ৭৫ কিছু হয়তো হয়নি আঠেরোই মে'র উদ্যাপনে কিংবা জুতো-ব্যবসায়ীর ছবি সামনে রেখে সভা করায়। কারণ, ভারত দেশের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় আমাদের প্রথম ভুবন। এখানে সরকারি কাজেও বাংলা চলে না, অধুনার সাহিত্য একাডেমি সভাপতি ধর্মতলার দোকানে দোকানে ঘুরেও পারেননি বাংলা সাইনবোর্ড লেখাতে। সেই তিনিই আবার সগর্বে বলে থাকেন উনিশে মে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, বিচ্ছিন্নতার ঘটনা। আরও একজন সুশীল বিদ্বান বলেন, স্বাধীনতার পরে রক্তমূল্যে ভাষাচেনার ঘটনা ঘটেনি ভারতবর্ষে (সুনন্দ সান্যাল)। সেইসব শ্রদ্ধেয়জনেরা বরাক উপত্যকার উপনিবেশে এসে এক নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেয়ে যান। একটি বই এর বিজ্ঞাপন নিয়ে খুব মজা হয়েছিল বছর ত্রিশ পঁয়ত্রিশ আগে। বই এর নাম এবং দাম পাশাপাশি, একটু উষ্ণতার জন্য পনেরো টাকা। বরাক উপত্যকার উষ্ণতার জন্যও অর্থ বরাদ্দ থাকে জাহাজ ভাড়া, আতিথেয়তা অধিক কিছুও থাকে। এবং ধন্য হয়ে ফিরে যান ভুলে যাওয়ার জন্য। কিছুদিন পর আবার ইচ্ছে হয় যাওয়ার। ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে মাঝারি দৈনিকের পোস্ট এডিট পৃষ্ঠায় আধকলাম লেখা হয় তাদের নিয়ে, যাদের তুষ্ট রাখলে ‘আবার খাব' বলা যায়। আপাতত এই চলছিল বরাক উপত্যকায়, কেউ এর বেশি প্রত্যাশাও করেনি। উপেক্ষিত ভুবন নিয়ে কলকাতায় কেউ লেখালেখি করে না ৷ জাটিঙ্গা, মধুরা নদী নিয়ে কবি কেউ কেউ লিখেছেন। অনেক আগে মনোজ বসুর লেখায় হাইলাকান্দি উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম ভুবনের লেখকের সময় কোথায় জানার, জেনে লেখার। এমন কীই বা আছে এই উপত্যকায়। ভুবনে। কোথাকার কোন ভুবনেশ্বর বাচস্পতি কিংবা নগেন্দ্রচন্দ্র শ্যাম, রাজমোহন নাথ, সুধীর সেন থেকে কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, সুজিৎ চৌধুরি, তপোধীর ভট্টাচার্য, শ্যামলেন্দু চক্রবর্তীদের আর কিসের উত্তরাধিকার । তৃতীয় ভুবনের ‘তৃতীয়’শব্দেই তবে শ্রেণী-বৈষম্য স্পষ্ট। দ্বিতীয় ভুবনের এক কথাকার, বাঙালির প্রিয়তম গল্পকার হাসান আজিজুল হকও বরাক উপত্যকা তথা ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা সাহিত্য চর্চার বিষয়ে, কিছু না জেনেই সম্পাদনা করেন ‘অসীমান্তিক' গল্প সংকলন এবং স্বীকারও করেন, অকপটে লেখেন সত্য কথা এরকম, ‘সত্যকথা এই যে উত্তর-পূর্ব ভারতের গল্প সম্বন্ধে আলাদাভাবে কোনো অবয়ব আমি গড়ে তুলতে পারিনি। আমার পাঠও খুব কম।' প্রশ্ন করাই যায়, হাসান আজিজুল হক তবে সম্পাদনা করতে গেলেন কেন। খ্যাতির বিড়ম্বনা না উপনিবেশতত্ত্বের সম্প্রসারণ। অপরিচয় দোষের নয়, কিন্তু পরিচিত হতে বাধা কোথায়। নাকি, বড়োর পিরিতি ওরকম হয়। তাহলে ‘বড়ো' শব্দের সংজ্ঞার্থ কী। নিজে যারে বড়ো বলে। ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের নির্ভরশীলতা কলকাতা-ঢাকাকে ছাড়তেই চায় না। এ বিষয়ে সুজিৎ চৌধুরির বিশ্লেষণ প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন, ১. স্বদেশি মেট্রোপলিটান শহরগুলোর সঙ্গে মফস্সল অঞ্চলের এক ধরনের ঔপনিবেশিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আমাদের কলকাতা মুখিতা তারই দ্যোতক।