পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৭৬


২. এখানকার মানুষের রুটিরুজির সংগ্রাম, মানবিক সম্পর্কের সংকট, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের পটভূমি সমস্তই যদি কলকাতার চশমা দিয়ে বিশ্লেষিত হয় তবে তা পণ্ডশ্রম হতে বাধ্য। ৩. দেশবিভাগের আগে বাংলা সাহিত্যের একটিমাত্র কেন্দ্র ছিল, আজ ঢাকায় দ্বিতীয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত, প্রয়োজনবোধে ঈশান বাংলায় বাংলা সাহিত্যের তৃতীয় কেন্দ্রের সূচনাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। (অনীশ্বর ১৯৮১) তাহলে তো কথা হয়েই গেল। ১৯৮১ ইংরেজিতে যদি সুজিৎ চৌধুরি চোখে আঙুল দিয়ে সারকথা বলে দিতে পারেন, ত্রিশ বছর পরেও কেন তার উত্তরসুরিরা পারছেন না। কলকাতার চশমা না হলে আমাদের কোনো দেখা, দেখার মতো হয় না ৷ কেন কোনো স্পৰ্দ্ধিত লেখক এখনও শিলচরকে উপনিবেশ ভাবেন, হাসান আজিজুল হক তবু স্বীকার করেছেন। অশিক্ষিত সবজান্তার মতো বলেননি শিলচরের বাঙালি মানে কিছু শিক্ষাহীন, রুচিহীন অসভ্য মানুষ, যারা নিজেদের সিলেটি বলে। ওদের কথা বলার ভাষাও উদ্ভট, কেউ বোঝে না এমনকি সিলেটিরাও বোঝে না। শহর শিলচর আর তার অধিবাসীদের খলনায়ক করে বাংলার এককালের প্রধান শারদীয় সাহিত্যের রত্নখনি ‘আনন্দবাজারে’ লেখা হয় উপন্যাস, এই শরতে। সেই উপন্যাস পড়ে বরাকজন বলেছেন, গেল গেল কী গেল। শিলচরে একটি প্রবাদ আছে 'হাগল বেটির লাজ নাই, দেখল বেটির লাজ'। বরাক উপত্যকাবাসীর লজ্জাও তাই সেই বিখ্যাত ঔপন্যাসিকের জন্য। উত্তরাধিকার' উপন্যাস লেখকের এই উত্তরাধিকার কে বহন করবে। বিখ্যাত সিনেমার 'কালিয়া'র মতো দশা হবে না তো। নিজের গুলি নিজেকেই না হজম করতে হয়। ঔদ্ধত্যের পরিণতি তো ওরকমই হয়, পাঠক ছেড়ে গেলে লেখকের আর রইল কী। ইদানীং এক সাহিত্য পত্রিকায় রত্নদীপ দেব নামে এক গবেষকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে লেখকের অবিনয় : ‘সপ্তাহ খানেক আগে 'বারোমাস বইমেলা' বিপণির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিলচরে এসেছিলেন সাম্প্রতিককালের অগ্রণী কথা সাহিত্যিক...। এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠেই জানিয়েছিলেন সুনীল-শীর্ষেন্দু-বুদ্ধদেব এবং তিনি ছাড়া এ মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে এমন আর কোনো কথাসাহিত্যিক নেই যাদের বই এর চাহিদা পাঠক সমাজে রয়েছে। পরবর্তী স্তরে তিনি আর একটু বাড়িয়েই বলেন 'সত্যিকারের মার্কেট যাচাই করে দেখুন না, দেখবেন আমরা চারজনই বেস্টসেলার। (দ্বিরালাপ-৪৮) এই না হলে বিখ্যাত লেখক। কেউ কেউ বলেছেন প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিবাদের আওয়াজ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু কেন প্রতিবাদ। তাঁর কাজ তিনি করেছেন, কামড়ে দিয়েছেন। প্রতিবাদ নয়, দরকার প্রতিষেধক, আর তাঁকে চোখে চোখে রাখা। ভুল তথ্য সংগ্রহের জন্য যেন আর আসতে না পারেন উপত্যকায়। উপমহাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতিতে শিলচর-হাইলাকান্দি- করিমগঞ্জ তথা সিলেটির অবদানকথা জানাতে শ্রদ্ধেয় নামের উল্লেখ মানে, নেম ড্রপিং এ নামকে শুধু নামিয়ে আনাই হবে। তাই, বরাক উপত্যকার গর্বিত নাম জানানোর