পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৭৭ কোনো দায় নেই এ প্রতিবেদনের। তাই, কোনো প্রতিবাদ নয়, ধিক্কার জানানোই দরকার এবং উপত্যকার বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ পড়ুয়া যদি ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারেন তবেই বালির বাঁধ প্রকট হবে। দিন কয়েক আগে এক সাময়িক পত্রিকার সম্পাদক দূরভাষে জানিয়েছিলেন তাঁর দৃঢ়তার কথা। বলেছিলেন, তাঁর পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার প্রকাশ অনুষ্ঠান হয় সাড়ম্বরে, কলকাতার সাহিত্যিক শিল্পী আনিয়ে উদ্বোধন করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও স্থানীয় সাহিত্যিক, গুণীজনের হাত দিয়েই উন্মোচিত হয় পত্রিকা। সাধুবাদযোগ্য প্ৰচেষ্টা সম্পাদক মহাশয়ার । কলকাতার ঢাকার লেখকদের সঙ্গে কী সম্পর্ক উপত্যকার লেখকদের। আদান-প্রদানের সুস্থ সম্পর্কই তো হওয়া উচিত। কিন্তু হয়েছে কি। বাস্তবে দোভাষীহীন আলাপচারিতায় উঠে আসে না কিছুই। নির্যাসহীন এক লুকোচুরি। কোনো সম্পর্কই হয় না, জলচলই নয়, পিরিতি। ওরা যে শিলচর-হাইলাকান্দি-করিমগঞ্জের লাটভবনে একদিন দু-দিন একহপ্তা কাটিয়ে যান। লেখালেখি নিয়ে জ্ঞান বিতরণ করেন মাগনায় । কই, এত এত দৈনিক থেকে সাময়িক পত্রিকা সাহিত্য পত্রিকা আছে এখানে কোথাও তো একটি লেখা দিয়ে কৃতার্থ করেন না। কোনো কোনো পত্রিকার কর্ণধার যথেষ্ট সম্মানমূল্য দিয়ে লেখা কিনতে আগ্রহী ছিলেন, দেন নি। কথা উঠতে পারে, তথ্য সত্য নয়, অনেকের অনেক লেখা ছাপা হয়েছে বরাক উপত্যকার কাগজে। হার মানতেই হয়, ছাপা হয় সত্যি, তবে দায়িত্ব নিয়ে এটাও বলা যায়, যা ছাপা হয় তার প্রতিটিই জেরক্স কপির লেখা। মূল লেখাটি কলকাতায়, ঢাকায় ছাপা হওয়ার পর স্থান তৃতীয়ের। একটি প্রান্তিক প্রাগৈতিহাসিক ভুবনের জন্য নতুন লেখার কষ্ট কেন করবেন বিখ্যাত। পাঠক কোথায়। শিলচরের অপরিচিত পাঠকের জন্য লিখে কী লাভ। এবার উল্টোটা এ উপত্যকার কোনো লেখকের লেখা ছাপা হচ্ছে ওদেশে। তপোধীর ভট্টাচার্যর ব্যতিক্রম নিয়ে কথা হবে হয়তো। হোক না, ব্যতিক্রমটাই নিয়ম হোক। উল্টোটাই হোক। বরাক উপত্যকার কবি-সাহিত্যিক-প্রাবন্ধিকরা প্রধান ভুবনে অপরিহার্য হয়ে উঠুন। উপনিবেশ প্রভুদের হঠিয়ে উপত্যকার লেখকরাই কেন হয়ে উঠছেন না নিজেদের প্রভু। বাংলা সাহিত্যের অপরিহার্য নাম। এর জন্য চাই মানসিকতার পরিবর্তন। হিন্দুকুশ পর্বতে উনানী সিকন্দরের সঙ্গে এদেশীয় সম্রাটের যথাযোগ্য সম্পর্ক যদি স্থাপিত না হয় তবে কেন পণ্যনায়কদের কিনে আনা। সভাপতি আর প্রধান অতিথি ভাড়া করা। পণ্ডিতের পূজা নিয়ে বিরোধ নেই কোথাও, তিনি সর্বত্র পূজ্যতে। তবে চাল আর কাঁকরের বাছাই ঠিক হলেই বেরিয়ে আসবে পাথুরে অসত্য, আর তখন পণ্যবাহী লেখককে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকবে না বরাক উপত্যকাবাসীর রূপকথার থার্ড বাইলেনেও আর থাকবে না ইঁদুরের উপদ্রব। দ্বিরালাপ ৫১। ডিসেম্বর ২০১০।