পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৭৯ তোলার চেষ্টা যে হয়নি তাও নয়। আম ফাঁক জাম ফাঁক মন্ত্র আউড়ে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি পালটানোও হয়েছে। অনেক সম্মেলন হয়েছে শিলচর করিমগঞ্জ বদরপুর লালা হাইলাকান্দিতে, ভুল রাজপুত্রদের আসা যাওয়াই সার হলো। শিল্প সাহিত্যে বরাক উপত্যকার উষরতা উর্বরতার দিকে একটুও এগোল না তাদের পদপাতে। কেন, উপত্যকার বিদ্বৎ সমাজ কি সব সময়ই আল্লা মেঘ দে, পানি দে বলে বাইরের মেসাইয়ার প্রতীক্ষায় থেকেছেন! স্বদেশী ত্রাণকর্তাকে ডাল বরাবর ভেবে বিরূপের আইএনআরআই দেগে দিয়েছেন ক্রুশের উপর। বরাকের লেখক হয়ে কী হবে, বাইরে কে পড়বে আমার লেখা। বা, অভিমানের আত্মপ্রবঞ্চনায় লিখেটিকে কী হবে বলে দুম করে সাহিত্যের পার্টটাইম ছেড়ে চাকরি বাকরি ঘরকন্নায় নিবিষ্ট হয়ে গেলেন লিখিয়েরা। বা একটু লিখতে পারার মতো হওয়ার পরে কলকাতা যাব, কলকাতার কাগজে বাংলা ভাষায় লিখব বলে দেশে থেকেও দেশান্তরী। কেউ কেউ বলেন, আমরা নাকি ধর্মতলায় বৃষ্টি হলে প্রেমতলায় (শিলচর) ছাতা ধরি। আর, পাঠক। চাকরি বাকরি করে পনেরো দিনের 'দেশ' পড়ে সাহিত্য রুচি সম্পন্ন বাঙ্গালির খ্যাতি বজায় রাখেন। আনন্দ সম্ভার এত বেড়েছে যে গৃহিনীর নবকল্লোল আর কেনাই হয় না। যে ক-জন স্বদেশ বৎসল আছেন, তারাও আদ্যিকালের লেটার প্রেসের অপেশাদার প্রুফরিডার, আলংকারিক ও দপ্তরিদের হাত দিয়ে বেরিয়ে আসা ছোটো পত্রিকার গুণবিচারের অবকাশ কতটা পেয়ে থাকেন। প্রতিকূলতা সয়ে, অনেকটা কাটিয়ে ‘সাহিত্য' পত্রিকার ২৫ বৎসর পেরিয়ে যাওয়াই বরাক উপত্যকার ভাষা সাহিত্যের গর্বিত উত্তরাধিকার। কলকাতার কবি বরাক উপত্যকার ছোটো পত্রিকা সম্পাদককে লিখে জানান ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়নি, বোধ হয় সেজন্যই ওই অঞ্চলের প্রতি আমার ঔৎসুক্য ও আকর্ষণ বেশি।' কবির ঔৎসুক্যের কারণ অজানাকে জানা, ভাষা সাহিত্যের সৌভ্রাতৃত্ব নয়। আত্মপ্রবঞ্চনার পরবর্তী বাস্তব ক্রিয়াই আত্মবিশ্বাস। তাই, মেসাইয়া তত্ত্বে অবিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসে স্থিত হওয়ার প্রক্রিয়াই এখন উপত্যকার স্থায়ী প্রত্যয়। বিশ্বাসের সঠিক রূপ নিয়ে ভেবেছেন বরাক উপত্যকার এক সম্পাদক ‘ভৌগোলিক অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা কারণেই এ অঞ্চলের বাঙালি সমাজ মূল সমাজ থেকে অনেক দূরে। দেশ বিভাগের পর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এ অঞ্চলে যে মুখের ভাষা ব্যবহৃত হয় সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের ভাষা থেকেও তার দূরত্ব অনেকখানি। এই বলয়ের বাঙলা উপভাষা সাহিত্যে তেমনভাবে গৃহীত হয় নি। জীবনের নিরাপত্তাহীনতা বিরাট অংশের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে প্রবাসী মানসিকতার। নিজেদের রেখেছে আত্মবিস্মৃত করে। এই অবস্থায় যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা চলেছে জোরকদমে তাকে প্রকাশ করার নেই কোনো বড়ো কাগজ, কোনো বড়ো প্রকাশক সংস্থা। কিন্তু বাইরের জগতে ঠিকঠাক