পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঊনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৮০ প্রকাশিত না হলেও এর একটা আলাদা চরিত্র বর্তমান।' এসব কারণের অনিবার্যতা নিয়েই চলেছে বরাক পারের রেনেশাঁ। বরাক উপত্যকা তার ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণে নিরত নীরবে, দৃঢ়প্রত্যয়ে। বড়ো কাগজ, বড়ো প্রকাশক সংস্থা নেই সত্য। যেখানে ভালো, বড়ো প্রকাশনা আছে, বাংলারই হোক তুলনামূলক সাহিত্যেরই হোক, বই কাগজ কিনে পড়তে তো বাধা নেই। গ্রন্থাগার তৈরি করার উদ্যম তো থাকতে পারে। সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার কথা কোনো সংস্কারকের ভাবনায় আসেনি। অঙ্গুলিমেয় পণ্ডিত পাঠক আছেন ক-জন, যাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ঈর্যাজনক ভাবে সমৃদ্ধ। বরাক পারে সাহিত্য ‘উহিত্য’ যারা করেন তারা শুধু লেখেন, পড়ার জানার দায়িত্ব যে তাদের আছে সে খবরের বোঝা তাদের পিঠ থেকে খোয়া গেছে হারাঙ্গাজাওয়ের অরণ্যে। বিষ্ণুশর্মার গল্পে বোকা ব্রাহ্মণের কথা আছে বিস্তর৷ পণ্ডিত ব্রাহ্মণ নিজেকে নিয়েই মজা করেছেন। এ মজা কোনো অবরোহী ভাবনা প্রসূত নয়। বরাক পারের ঐতিহ্যে গর্বিত লেখক তাকে আরও উচ্চাসনে বসাতে গিয়ে কিছু অভিমানের বিরূপতা হয়তো নিয়ে এসেছেন রচনায়। 'আমিই শ্রেষ্ঠ' বলা সহজ, মান্য হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এই রচনা-প্রয়াস এক বৃহৎ আলোচনার উপক্রমণিকা মাত্র। এর একটি ঐতিহাসিক কারণও আছে, বরাক উপত্যকার ভাষা সংস্কৃতির ইতিহাসকে অর্বাচীন ভাবার প্রবণতা বাংলার প্রধান ভুবনে বিদ্যমান বলে এক এবং দ্বিতীয়ত ঐতিহ্যের পুননির্মাণে নিরত আমাদের তৃতীয় ভুবনকে অভিনন্দন জানাতেই এই কথা, কথামুখ। বিগত বঙ্গীয় শতাব্দীর সূচনায় প্রাপ্ত তাম্রশাসন থেকে চতুর্দশ শতকের সুচনাকাল পর্যন্ত, অস্যার্থে বহমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত সুরমা বরাকের ঐতিহ্য। ভাষা সংস্কৃতির সাথে চর্চার যোগ যদিও অঙ্গাঙ্গি তবু দুইকে একটু আলাদা করার প্রয়োজন আছে। আছে একারণেই জীবন তার প্রয়োজনে ভাষাকে তৈরি করে সংস্কৃতির সাথে তাকে চালিতও করে। একটি সচল পথ ধরে এগোয়। সময় যেমন চায়, তার রূপও পাল্টায়। তাত্ত্বিকতা ভাষাকে চলমান রাখে না, তাতে অন্য উপকরণও যোগ করে। ভাষা তার বহুমুখী প্রকাশ ভঙ্গি পায়। বললেই হলো না, থামা, চলা, বাঁক ফেরা, পরীক্ষা নিরীক্ষার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। বরাকেও তার ভাষা সংস্কৃতি নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে গেছে আধুনিকতার ব্রেক ইভন পয়েন্টে যেখানে সাহিত্য নিন্দনীয় যান্ত্রিকতার অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হয়নি। বরাক উপত্যকা গর্ব ভরে জানিয়েছে তার সাহিত্যও বাংলার মূলধারার ব্যতিক্রম নয়। এখানে বাংলা ভাষা কথ্য রূপে যেমন লিখিত রূপেও বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে চলেছিল, বঙ্গাব্দের দ্বাদশ শতক পর্যন্ত। তারপরের পর্বেও, বিশেষ করে স্বাধীনতার পূর্ব ও উত্তর-পর্বে, ভৌগোলিক কারণে, বরাক উপত্যকার সমাজ বহির্বিশ্বের আলোড়নের সাথে সম সময়ে আলোড়িত হয়নি বলেই, বাঁক ফেরা সহজ হয়নি। মেট্রোপলিটন মানসিকতা থেকে দূরে ব্যক্তিগত ভাববিশ্বে বিচরণ করেছেন কবি সাহিত্যিকেরা।