পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাবার সংকট ০ ৮১ ভোগবিশ্বের বিবর্তনও অতি ধীরে তার সংক্রমণের দাঁত নখ নিয়ে এগিয়েছে বলে অবক্ষয়ের স্বরূপ অধরা থেকেছে। গ্রাম্যতা কিছু তো ছিল। প্রথম উজ্জ্বল কাব্য সংকলন ‘অরণ্য পুষ্প' নামেও তেমন ইঙ্গিত ছিল। এরপর আর তেমন নামের ঈশারা হয়নি বরাক উপত্যকায়। উপত্যকার বাংলা সাহিত্যের ভাবজগত আলোড়িত করে বেরোল ‘অতন্দ্ৰ’। চোখ-কান খোলা রেখে পুরব ঐতিহ্য আর পশ্চিমের তত্ত্বগত মননকে স্বীকার করে বরাকের এই প্রথম প্রমত্ততা। 'কবির শহর শিলচর' অভিধা অতন্ত্রের গোষ্ঠী ইতিহাসের এক অনতিক্রম্য ধাপ। একক রচনার অগ্নি বরাক উপত্যকাকে সব সময় উত্তাপে জারিত করেছে। ইতিহাসের উপাদান হয়ে সময় বয়ে গেছে। অতন্দ্রও এক সময় অনন্ত যাত্রায় গেল। আর কবিরা জোট বাঁধলেন না। তাই, আবার ব্যক্তিগত ধার করা মুখ্য ধারায় কবিতা লেখা শুরু হলো। ব্যতিক্রমী আগুন জ্বেলে রাখার দায় কাউকে তো নিতেই হয়, নইলে যে প্রত্যয় মার খায় ৷ ঐতিহ্যের ধারাবাহিক ইতিহাস রচনার প্রধান পুরোহিত গদ্যকার। প্রধান দুই গদ্যকারের একজন 'শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস' প্রণেতা আর অন্যজন তরুণ রচনার অগ্নি' লিখে বিতর্কের শীর্ষে। বিজ্ঞানসম্মত রচনা পদ্ধতি আর গবেষণা লব্ধ জ্ঞান পরিবেশনে এদের সমকক্ষ কেউ নেই বরাক ভূমিতে। পুনর্নির্মাণে আরও অনেকেই নিরত আছেন। গবেষক ডক্টরেটের সংখ্যা যেখানে অগণ্য, দু-জনকে আলাদা করে বিশিষ্ঠতা দিতেই হয় । বাংলা গদ্যের শক্তিশালী চলমান জীবন ও ইতিহাসমুখি প্রধান ধারাই এখন ছোটোগল্প৷ ছোটোগল্পের প্রধান উপাদান সময়। এই সময়কে সব সময়ে মহাসময়ে নিয়ে যেতে পারে ছোটোগল্প, সময়ের সময়চিহ্ন মুছে দিতে পারে সাহিত্যের এই একমাত্র মাধ্যম । বাংলা ভাষার সমৃদ্ধতম শাখা গল্পের ভুবনেও বরাক উপত্যকা অনেক এগিয়ে। বাংলা ছোটোগল্পের আলোচনায় ‘শতক্রতু' ‘অনিশ’ এই দুই পত্রিকার ভূমিকাই প্রধান এবং একমাত্র। ছোটোগল্পের হয়ে ওঠার সময়কে ধাত্রীর মমতায় লালন করেছে এই দুই ছোটো পত্রিকা। এখন তো 'সাহিত্য' বরাক উপত্যকায় অল ইন ওয়ান। ‘ফেরারী' গল্প দিয়েই উপত্যকায় ছোটোগল্পের বাঁক ফেরার ইতিহাস। ‘গোপাল যখন বিচারক’, ‘আসরাফ আলির স্বদেশ”, ‘কাক’ আর বড়ো গল্পে 'পু ঘোষ' নামে আসবেই । বিন্যাস ও কনটেন্ট পাশাপাশি না চলায়, মূল ভাষা এরিনায় ঢুকতে দেরী হচ্ছে। 'এ অঞ্চলের বাংলা উপভাষা সাহিত্যে তেমন ভাবে গৃহীত হয়নি' গল্পকারের কাছে এ এক মৌলিক প্রতিবন্ধকতা হয়তো। হতে পারে, গ্রাম জীবনের একঘেয়েমি থেকে গল্প উঠে আসছে না, বা কলকাতা নেই শিলচর হাইলাকান্দি করিমগঞ্জে। এই রচনাকারের একাশি সালের এক রচনার কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার প্রয়োজনে 'কলকাতা যে কলকাতাই—কলকাতার পার্ক আছে ট্রাম আছে, ইষ্টবেঙ্গল, মেট্রো আছে, নক্সাল আছে ময়দান ভিক্টোরিয়া, ঘোড়ার প্যাডক ফ্রি স্কুল এটা সেটা এবং বেড়াবার গিরিডি,