পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৮৪

উপন্যাস। সর্বশেষ সংযোজন বনমালী গোস্বামীর ‘প্রথম গান’, ঝুমুর পাণ্ডের ‘গাঙগাথা’, দেবীপ্রসাদ সিংহর ‘দেশ’। বছর কুড়ি আগে অধ্যাপক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য আঠাশটির কথা লিখেছিলেন, এতদিনে তা অর্দ্ধশত পেরিয়ে গেছে। নথিভুক্ত আঠাশটির কথা বলারও একটি উদ্দেশ্য আছে, আঠাশ থেকে পঞ্চাশে পৌঁছানোর প্রতিটি আখ্যানই হয়েছে লেখকের মাস্টার স্ট্রোক। খোলা বাজারে পণ্যের মান বজায় রাখতে হয় যে। নইলে আইএসও হলমার্ক হয় না। বরাক উপত্যকার প্রবন্ধ সাহিত্য আজ উপত্যকার সীমার বাইরেও প্রতিষ্ঠিত। প্রথম ও দ্বিতীয় ভুবনে সাহিত্যতত্ত্বের চর্চা তপোধীর ভট্টাচার্য ছাড়া হয় না। ইতিহাস প্রত্ন-ইতিহাস গবেষণায় সুজিৎ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন সিলেট কাছাড়ের আত্মপরিচয়। ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লিখিত প্রবন্ধাবলীর জন্য কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য থাকবেন আমাদের নয়নের মণি হয়ে।

 আর, সব গাছ ছাড়িয়ে এক অপৌরুষেয় শক্তির আবির্ভাব হয়েছিল পঞ্চাশ বছর আগে উনিশ শ একষট্টির উনিশে মে। আমাদের রক্তস্রোতে প্রবাহিত ভাষাজীবন উনিশে মে। এগারো জন শহিদ দধীচির রক্তে মাতৃভাষার অবগাহন হয়েছিল। হয়েছিল এক বিশালের আবির্ভাব। বাংলাভাষাভাষী বরাক উপত্যকায় সরকারি নির্দেশে অসমিয়া ভাষা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বারবার বরাক উপত্যকার পুণ্যভূমি ভাষাশহিদের রক্তে প্লাবিত হয়েছে, হয়েছে উর্বরা। ভাষাশহিদের রক্ত বরাক উপত্যকা কখনও ভোলে নি ভুলবে না। সেই অমোঘ শক্তি ছাড়া এখানে কালো কালো অক্ষরের কঙ্কালও কেউ গড়তে পারে না। সেই বিঘ্নহর্তা শক্তিকে প্রণাম না জানিয়ে আদাব না জানিয়ে এই উপত্যকার কেউই কোনো লেখার শ্রীগণেশ করতে পারে না। এরই অব্যবহৃত পরে অন্য এক সংঘশক্তিরও আবির্ভাব হয়। ‘কাছাড়া সাহিত্য পরিষদ’ এর ঐতিহাসিক উদয় এবং বিলয় ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’ গঠনের মধ্য দিয়ে। বরাক উপত্যকার ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধাতৃমাতৃকা। মায়ের অঞ্চল ছায়ায় বেড়ে উঠছে উপত্যকার বাংলা সাহিত্যের পত্রপুষ্প।

 বর্ণিত হল উত্তরাধিকার কথা, মননের কমলবন কথা। এবার পদার্পণ হোক তবে বিচরণ ক্ষেত্রে। ছোটোগল্প লিখিয়েদের কথা। শক্তিপদ ব্রহ্মচারী ও বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য বলতেন বিশ্বজিৎ চৌধুরীর কথা। অসাধারণ গল্পকার। চোখে দেখিনি নাম শুনেছি দ্রোণাচার্যের। লেখা পড়েছি ‘সমীরের প্রতিদ্বন্ধী’, এমন কথাকার কেন যে ত্রিপুরার ভাগে পড়লেন। পরেশ দত্ত গল্প লিখেছেন ‘দেশ’ এ। মনে হত হিরো, এখনও লেখালেখির পঞ্চাশ পঞ্চান্ন পেরিয়েও সমান ক্রিয়াশীল। আমরা আমাদের মতো লিখতে শুরু করি। কিন্তু ছাপবে কে। কবিতা ছাপা সহজ, এক পাতায় একজন দু-জন তিনজনও হয়ে যায় সুজন কবি। গল্পের ফর্মাধরা কাগজ যোগাবে কে। শিলচরে বৎসরে একবার বেরোয় ‘সম্ভার’ বিজ্ঞাপনের ভার নিয়ে। ‘অরুণোদয়’ ও একবার। নিজস্ব লেখকদল আছে। মিনির হুজুগে কিছু মিনিগদ্য লেখা হয় ‘ডাউক’এ। সত্তরের শরতে এক বিস্ফোরণ হয়,