পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৮৬

প্রভূত গদ্যদায়িনী শতক্রতুও বন্ধ হয়ে যায়। সম্পাদকের গভীর দুঃখের সাময়িক অভিব্যক্তি এরকম: 'আমরা বাংলা ভাষাতেই লিখি, অতএব আমরা বাংলা সাহিত্যের লেখক। কিন্তু আমাদের মতো শূদ্রজনদের জন্য একদিকে স্কাইলা এবং অন্যদিকে স্কেরাইবডিস। আমাদের কেউ তো মাথার দিব্যি দেয় নি তবুও কেউ বিক্রি করি স্বর্ণালঙ্কার কেউ বা রেডিও। শহরময় কার্ফু এলাকা বাড়ে, শিলচর থেকে কাবুল একটানা রেলপথ হয় এবং চুল দ্রুত লজ্জায় লাল থেকে গ্লানিতে সাদা হতে থাকে (তপোধীর ভট্টাচার্য, পূর্বশ্রী ১৯৮৭ ইং)।’

 না, মোটেই শিবের গীত গাইছি না। এ আমাদের জাতীয় বিলাপ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লিটল ম্যাগাজিনের নিয়তি কথা। বাংলা ভাষার লিটল ম্যাগাজিনের ললাট কথা। বাহিত উত্তরাধিকার। ছোটোগল্পের উত্তরাধিকার কি সত্তর থেকেই শুরু তৃতীয় ভুবনে। তাই তো মনে হয়। বিতর্ক হতেই পারে। শাস্ত্রবিরোধী একদিকে, হাংরি একদিকে, নিম আর একদিকে। দেশ অমৃত-র মতি নন্দী, বিমল কর, সমীর রক্ষিত, সুনীল, শীর্ষেন্দু, সন্দীপন, সিরাজরা। আর একদিকে সাধন ভগীরথ অভিজিৎ তপন অমর নলিনী কিন্নর শচিন স্বপ্নময়রা। ওপারে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক সেলিনা হোসেন হারুন হাবিব রাহাত খান মঞ্জু সরকার ওয়াসি আহমেদ জাকির তালুকদার স্বকৃত নোমান ও সুশান্ত সরকার। তখন থেকেই খোলা বাজার শুরু। দামি দামি লেন্স আসছে বিদেশ থেকে। মানে দেখার চোখ, বিদেশি সাহিত্য অধিগম্য হচ্ছে সহজে। লাতিন আমেরিকা থকে জটিল থেকে জটিলতর ভাষার জাদু কিন্তু মাটির মায়ায় জড়ানো। অদ্য একটি গদ্য লিখব মনস্ত করে আর কবিগানের আদলে গল্পলেখা চলবে না বুঝতে . পেরেছে বরাক উপত্যকার তথা ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ গদ্যমানচিত্রের রূপকাররা। ছোটোগল্পের শরীরে এল কোটালের জৌলুষ, তোলপাড়। অনেক কারুকাজ ও আলোর বিচ্ছুরণ। যেমন তেমন লিখলে চলছে না। বিশ্ব এখন একাকার, একের সঙ্গে সবার লড়াই, সব গাছ ছাড়িয়ে যেতে হবে। পশ্চিমের সাহিত্যতত্ত্ব তার মর্মভেদি ক্যামেরা দিয়ে দেখছে দাঁড়িকমা সেমিকোলন মধ্যবর্তী প্রতিবেদন পর্যন্ত। কিংবা তাও নয় দাঁড়ি কমাও নেই, প্রতিবেদনে যা নেই সেই অনুপস্থিত সত্যকেও উদ্‌ভাসিত করছে রহস্যের বাক্যভেদি বয়ন। তত্ত্বকথায় নতুন কোনো বিতর্ক উপস্থাপিত হয় না কারণ ডিম এবং পাখির জন্মকথাও আবহমানের। সব সত্যের মতো তত্ত্বও সত্য। তত্ত্ব হল পাউরুটি কিংবা ভাত চাপাটির নিহিত উপাদানগুলি বিশ্লেষণ করা। খাওয়ার আগে গুণকারী দিকগুলি জেনে নেওয়ায় মন্দ কী, পড়ার আগেও তেমন জানলে পাঠক উৎসুক হবে। পটুত্ব যে শিক্ষায় সমাপ্ত হয় এও সত্য। এইসময়ের এক কথাকার, কনিষ্ঠ এক তত্ত্ববেত্তাকে অনুরোধ করেছেন একটু সহজ করে ফুকো লাকা দেরিদা বাখতিন বুঝিয়ে দিতে যাতে পত্রবিহারি কথাকার আরও খ্যাতনামা হতে পারেন। অনিলবাবুর ব্যাকরণ পড়ে আমাদের ভাষা শিক্ষা হয়েছে। শব্দের সত্যজ্ঞান কিংবা তার শীলিত স্বভাব জেনেছি শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত মারফত। সাহিত্য সমালোচনা শিখেছি বাংলা উপন্যাসের কালান্তার’