পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৮৭

পড়ে, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়-এর ‘বাংলা ছোটোগল্প’ পড়ে। হঠাৎ করে তুমুল আন্দোলন শুরু হবে, পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্বের লেন্স কেনার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে যাবে কে জানত। দেবেশ রায়, পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় আর তপোধীর ভট্টাচার্য খুল যা সিমসিম না বললে আমরা এখনও গোল গল্পের ভুল চাবি দিয়ে সঠিক তালা খোলার চেষ্টা চালিয়ে যেতাম। পাঠক আর বোকা নয়। পাঠককে ভেংচি কাটলে চলবে না, একশ শতাংশ না দিলে পরের ম্যাচে বাতিল। মাঠে দাঁড়িয়ে নাক খুঁটলে চলবে না, অকারণ বাঁদর বলা চলবে না, স্লেজিং ধরবে ওয়ার্লড টেল-এর পঁচিশটা ক্যামেরা, মাটির নীচের মাইক্রোফোন স্ট্যাম্পের ভিতর বিদ্যুত তরঙ্গ। লেখকের করার কিছু নেই। অথর ইজ ডেড। এখন সবাই অথর। বড়ো বড়ো কথা হয়ে যাচ্ছে, দেবেশবাবু তপোধীরবাবুরা রাগ করবেন। আসল কথায় যে এলেম না। এলেমের কথাই আসল। এলএম মানে লিটল ম্যাগজিন। ছোটো পত্রিকা। যেখানে আমরা কথাকারেরা লেখালেখি করি। লিটল এর প্রতিপক্ষ বৃহৎ। ওখানে আমরা কেউ না। লেখালেখির পণ্য বাজারের বাইরে। প্রতিবাদ আর বিপ্লব হল ঘটমান বর্তমান। আমরা বর্তমানে থাকতে চাই, যা চলছে তাতেই থাকতে চাই। তাই বৃহতের সঙ্গ চাই না। বৃহৎ হল বিপ্লবোত্তর স্থিতাবস্থার ইজারাদার, সমঝোতা বৃহৎ মানে ফিনিশড প্রোডাক্ট। ফিনিশ মানে তো শেষ, লিটল হল আঁতুরঘর। লিটল হল খোলা আকাশ। লিটল মানে সৃষ্টি। নামে ছোটো হলেও সুজনের বাস এলএম এর তেঁতুল পাতায়।

 আমাদের উপত্যকায়, আমাদের ভুবনে কোনো বৃহৎ নেই। কোনো প্রতিষ্ঠান নেই তাই আমাদের লড়াই আমাদের নিজস্ব। আমাদের লড়াই অপরিচয়ের। আবার অপরিচয়টাই আমাদের স্পর্দ্ধা, কারণ আমাদের কেউ চেনে না, আমরা আনকোরা, আমরা মেঘনাদ। আড়াল থেকে লড়াই করি বাংলা ভাষার সপক্ষে। বাংলা ভাষার যে দুটো ভুবন আছে তার প্রধান যে, অন্তত প্রধান বলে ভোট দিয়েছে যারা, মুকুট পরিয়েছে যারা তারা কোথায় থাকে কেউ জানে না। বরাক উপত্যকার নাম খুঁজে পাওয়া যাবে না বাঙালি ভুবনে। কোথায় যেন গুয়াহাটিতে, আগরতলায়, বাংলাদেশে, তিনসুকিয়ায়, ডিব্রুগড়ে ওখানে বাংলা ভাষায় কথা বলার লোক আছে তো, এসব প্রশ্ন তো নির্বিঘ্ন, অতি সাধারণ। কোনো এক স্পর্দ্ধিত লেখক এখনও এই উপত্যকাকে উপনিবেশ ভাবেন, ভাবেন তার বিজিত সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্র অংশ। সভাপতি ভাড়া হয়ে যান এরোপ্লেনে, পানভোজনের পর বদহজমে লেখেন এখানকার বাঙালি মানে কিছু শিক্ষাদীক্ষাহীন রুচিহীন অসভ্য মানুষ, যারা নিজেদের সিলেটি বলে। ওদের কথা বলার ভাষাও উদ্ভট, কেউ বোঝে না এমনকি সিলেটিরাও বোঝে না। বরাক উপত্যকা আর তার অধিবাসীদের . খলনায়ক করে বাংলার এককালের প্রধান শারদীয় সাহিত্যের রত্নখনিতে লেখা হয় উপন্যাস এক শরতে। এ তো গেল অবজ্ঞা। অচেনার কথাও কম বেদনার নয়। তিনভুবনের ঊনষাটজন গল্পকারের এক দুর্লভ সংকলনের সম্পাদনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের তিন বিখ্যাত কথাকার। প্রধান সম্পাদক হাসান আজিজুল হক সম্পাদকীয়তে