পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৮৯

৩। দেশ বিভাগের আগে বাংলা সাহিত্যের একটিমাত্র কেন্দ্র ছিল, আজ ঢাকায় দ্বিতীয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত, প্রয়োজনবোধে ঈশান বাংলায় বাংলা সাহিত্যের তৃতীয় কেন্দ্রের সূচনা ত্বরান্বিত করতে হবে।

 শেখর দাশ কথাকার একটু চাঁছাছোলা। বলেন, ‘শোনা যায় আঞ্চলিকতার কথা। শিলচরের কথা অতএব মালুগ্রাম সেণ্ট্রাল রোড দেওয়ানজি বাজার। যদি হাইলাকান্দির হয় রাঙাউটি লক্ষ্মীশহর হার্বাটগঞ্জ ইত্যাদি। এ ধরণের কনজারভেটিভ আঞ্চলিকতার কোনো মানে নেই। হাস্যকরও বটে। অবশ্য শিলচরি গল্পে কোনো চরিত্র যদি আত্মহত্যায় উৎসাহী হয় তো নিশ্চয়ই হাওড়ার পুল থেকে গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়বে না। পড়া উচিতও নয়। যদি পড়তেই হয় হাতের পাশেই বরাকের উপর আছে নয়নলোভা একটি সেতু। আঞ্চলিকতা ব্যাপারটাই বড়ো গোলমেলে। কাশ্মীরী কাঠ দিয়ে কাজিরাঙার গণ্ডার তৈরি করছে ভারত বা পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের শিল্পী। রক্ষণশীল আঞ্চলিকতার সুবেদারগণ এই শিল্পসৃষ্টিতে কীভাবে আঞ্চলিকতার চোখ রাঙানো রেখা টেনে দেবেন? মুশকিল, সত্যিই মুশকিল।

 মুশকিল তো বটেই। সাহিত্যে অঞ্চল বলে কিছু হয় না। তবু আমরা ইউরোপীয় সাহিত্য, ভারতীয় সাহিত্য বলি, বলি নবাবিষ্কৃত লাতিন আমেরিকার স্বর্ণখনি। বরাক উপত্যকা তথা তৃতীয় ভুবনও অঞ্চল। এই অঞ্চলের নিজস্ব যন্ত্রণা আছে, সমস্যা আছে আনন্দ আছে বঞ্চনা আছে, আছে তার নিজস্ব রঙ্গরস, তার কার্নিভ্যাল। আছে সময়। তার যৌনতা তার প্রতিবাদ! অসংখ্য বাঙালি আজও পশ্চিম বাংলার বাইরে আসামে ত্রিপুরায় মেঘালয় নাগাল্যাণ্ড মণিপুরে বহুজন্ম ধরে যুদ্ধরত, তাদের খবর কেউ রাখে না। আমরা কলকাতা, পুরুলিয়া, বালুরঘাট, মেদিনীপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী যেখানেই যাই না কেন আমাদের তৃতীয় ভুবনের দিকে মুখ ফেরাতে বলি, সহযোদ্ধার সম্মান জানাতে বলি। তরুণ রচনার অগ্নি' আর 'অন্য ভুবনের গল্পবিশ্ব' এই দুটি রচনায় তপোধীর ভট্টাচার্য বলেছেন, তৃতীয় ভুবনের বাঙালির কথা, 'এরা প্রত্যাখ্যাত ও দূরীকৃত অপর হিসেবে অনাদৃতই থেকে যান। সন্ত্রাসবাদ, আঞ্চলিক উপনিবেশবাদ, মৌলবাদ, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, সামন্তবাদ, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা ইত্যাদির সঙ্গে আক্ষরিক অর্থেই লড়াই করতে করতে এদের বেঁচে থাকার তাৎপর্য সম্পর্কে ক্ষণিকের বিষাদ বিলাস পর্যন্ত এগোনো বাঙালির প্রথম ভুবনের বাসিন্দাদের দায়বোধের সীমা। দ্বিতীয় ভুবনকে কোনো ভাবেই অস্বীকার করা যায় না বলে বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে আমরা বছর বছর নড়ে চড়ে বসি। কিন্তু স্বাধীন ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাজ্য আসামের শিলচরে একষট্টি সালের উনিশে মে দশটি তরুণ ও একটি তরুণী যে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিল, বাহাত্তরের সতেরো অগস্ট ও ছিয়াশির একুশে জুলাই আরও তিনজন তরুণ প্রাণ দিয়েছিল তার কোনো হদিশ আমরা রাখি না। খবর রাখি না ক্রমশ বিপুল চক্রান্তের ফলে ত্রিপুরা কীভাবে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। মেঘালয়ের শিলঙে, আসামের বিভিন্ন