পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৯১

প্যাভেলিয়ানের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানোতেও সমান দক্ষ। প্রথম ইনিংসের শতক্রতুর সেই দুরন্ত গল্পগুলি বড়ো পরিশীলিত, কপিবুক এখন। শেখর আবিষ্কারক তপোধীর ভট্টাচার্য লেখেন “‘ক্রমশ তাপ’ থেকে ‘শ্বেত রক্তকণা’ যে অ্যাবসার্ডিটির নতুন গ্রন্থনা। চেতনার চেয়ে বড়ো অবচেতন, ভাষার চেয়ে গুরুত্ব পরাভাষার। বাংলা সাহিত্যে ‘জোড় শালিখ’, ‘ফেরারী’, ‘ডায়নোসরের ফুসফুস’ শব্দের প্রতিচ্ছবি’র মতো গল্প আবার কবে লেখা হবে কে জানে।”

 ‘সাহিত্য' পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক অরিজিৎ চৌধুরী টানা ইনিংস খেলেছেন নির্ভুল। রূপদক্ষ শিল্পী, যে সমাজে বাস করেন, যে সম্পর্কে সময়ের ঘুড়ি উড়ছে আকাশে, সেই লাটাই এর সুতো চেনেন হৃদয়তন্ত্রীর মতো, তাই তার ভাষা মেদহীন কিন্তু সরাসরি। গল্পে ঢুকে যান এবং এক দুর্নিবার আকর্ষণে পরিণতির দিকে নিয়ে যান। আসাম দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের নিজস্ব কিছু সমস্যা আছে ভাষার ধর্মের এবং জাতির। আগুন’নামের ছোটোগল্প ‘পু ঘোষ’ নামের বড়ো গল্পে অরিজিৎ বড়ো জরুরী। বড়ো বেশি দায়বদ্ধ।

 করিমগঞ্জের সুব্রত কুমার রায় এখন কলকাতায়। ব্যাঙ্কের পদস্থ হওয়া কি মেধায় ভাগ বসাচ্ছে। ‘দেওলা' গল্পে যেমন কেড়ে ছিলেন পাঠকের মন, তারপর আর আনমনা হতে দেন নি। ‘আরশিনগরের রূপকথা’র পর অনেক গল্প লেখা হয়েছে, সুব্রত নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। তৃতীয় ভুবন-গল্পে মিথ ও জাদুর জাদুতে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার গল্পবলার ঢং পাল্টে বাংলা ভুবনে প্রতিস্থাপিত করার অন্যতম স্থপতি তিনি। প্রথম গল্পগ্রন্থ হর্হে লুই বর্হেসকে উৎসর্গ করেন নি কিন্তু এক উন্মুক্ত প্রবন্ধে বন্ধনহীন গ্রন্থি বেঁধে দিয়েছেন এরকম, 'যেহেতু সাহিত্যের শুরুতে থাকে মিথ এবং শেষেও তাই।’ এর পর স্পেস দিয়ে বর্হেস নাম। বই এর নামকরণের দ্বিধা কাটাতে ইংরেজি করেছেন ‘Tales of mirrorland' কী জানি, পাঠক থেকে তো বড়ো নয় অথর।

 স্বপ্না ভট্টাচার্যকে লক্ষ করেছেন সবাই সভয়ে। বাংলা ভাষার এমন শক্তিমান লেখককে বরণ করতেও বুকের পাটা লাগে। জীবন দেখতে লণ্ডন, প্যারিস, দুবাই যেতে হয় না। মূল্যবোধ যখন ভাঙে শহর শিলচরেও ভাঙে। স্বপ্না ভট্টাচার্যর স্বপ্নলোকও তার প্রিয় শহর, উপত্যকা। বরাক ব্রহ্মপুত্র মহানন্দা যমুনার অভিজ্ঞ জলসঞ্চারী কথাকার যখন স্বপ্ন দেখেন সে স্বপ্নে লেগে থাকে শিকড়জলের ঘ্রাণ। তাই বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপুজোর মতো অভ্যাসে উনিশে মে পালিত হতে দেখলে ক্রোধ হয় তার। স্বপ্না লেখক মানুষের ভাষায় রাগ প্রকাশ করেন বলেই তিনি আলাদা। প্রলোভন থাকলেও ভাষার চাতুর্য পরিহার করেন। সহজ নদী উজানে বইলেও ভাটির টানে গড়িয়ে দেন। লেখকের মুদ্রাদোষও সহজ মনে হয়। প্রিয় জীবিকা বারবার ফিরিয়ে এনেছেন, লালকমল, নীলকমল শীতবসন্তের মনখারাপ থেকে মহাজননীর উত্তরণে হারিয়ে গেছে মুদ্রাদোষ। ‘নোটবুক’-এর নির্যাতনে নারী প্রাধান্যও মানিয়ে যায়। নারীর কথা লিখেছেন তবু মনে হয় না তেমন নারীবাদী। দু-একটি ভ্রূণহত্যা ছাড়া কোনো মৃত্যুকথাও বর্ণিত হয় না তাঁর কথাবয়নে। ‘আজ বনভোজন' গল্পেও মৃত্যু ৯ ডিগ্রি হিমাঙ্কে শীত হাওয়া ও বৃষ্টিতে