পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১২ মাখামাখি।' নরম মন নিয়েও দুনিয়ার অসঙ্গতি বদলে ফেলার ফাইট ছাড়েননি। নীল নীল মিঠে স্বপ্নই শুধু দেখেন না লেখক, পাল্টেও ফেলেন জীবনের ফরম্যাটে। বাস্তবতার দাসত্ব নয়, বাস্তবতা সৃষ্টিও করেন। নিজের সঙ্গে আলাপের ‘পয়োধীর' গল্পই বাঁক নেয় ‘উজান’-এর দ্বিরালাপে, ‘নোটবুক' ‘মেড ইন আমেরিকা'র বহুস্বরে একটিমাত্র বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। ‘মানববর্তন' ও 'বাস্তুহীন' গল্পে বরাক উপত্যকা তথা আসাম-বাঙালির সংকটের স্বরূপ উন্মোচনে তিনি সত্যান্বেষী ও স্বেচ্ছাসেবক। তাই প্রত্যাশার উচ্চাশা জারী রেখে জানাতেই হয় স্যালুট এবং প্রিয় ভাষাভূমির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকারকে স্বদেশি পাঠকের ব্যক্তিগত ঈর্ষাও। মিথিলেশ তো শাহেন-শা। তৃতীয় ভুবনের কথা সাম্রাজ্য একা শাসন করছেন প্রায় অর্দ্ধ শতাব্দী ধরে। জীবনকে মিথিলেশ দেখেন টুকরো টুকরো করে। ঘটনার ঘনঘটা দিয়ে জটিল থেকে জটিলতর হয় না তার কথা বয়ন। বরাক উপত্যকার মানব মনে নাগরিক চাতুর্য কম তাই উচ্চাবচতাও ধরা পড়ে না মিথিলেশের গল্পকুশীলবের নড়াচড়ায় । নিম্ন মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনসুন্দরকে খুঁজে বেড়ানোই তার উদ্দিষ্ট। মিথিলেশের গল্পপাঠ এক অভিজ্ঞতা, এক শুদ্ধতা, তার গল্প মিতকথায় বিশ্বাসী। জীবনানন্দকে ধ্যানজ্ঞান জেনেছেন শুরুর দিন থেকে। যেদিন মিথিলেশ লেখেন ‘ছারপোকা’, অসাধারণ জনপ্রিয়তার প্রথম ধাপ, নতুন রচনারীতির কথা প্রবেশ, এক ছোটোগল্প। বাংলা ভাষার এই দ্বীপভুবনে কেউ ভাবে নি যা, বরাক উপত্যকার রক্ষণশীল সমাজের জীবন ও যৌনতা নিয়ে এক নিটোল আখ্যান। তারপর একে একে ঝাঁপি ভরে ওঠে গল্পের, মিথিলেশ লেখেন 'গোপাল যখন বিচারক' ‘প্রাত্যহিকতার ডামাডোলে প্রতুল' ‘কেশবলালের ভূমিকা' 'আট বছর আগের একদিন' ‘নষ্টশশার' মতো বাঁক ফেরানা কথার নবীন বয়ান। নষ্টশশা নামের ব্যঞ্জনা এখনও অনেক কথা শুনিয়ে যায় গল্পশেষে। বরাক উপত্যকার ছোটোগল্পের আদিপর্বের গোলাকার ভুবনকে অনেকার্থ দ্যোতনায় ব্যাপ্তি দিয়েছেন মিথিলেশ। বরাকের গল্প বাড়ির স্থপতি মিথিলেশ ধারাবাহিকতায়ও সবার থেকে আলাদা। দু-হাজার তিনে তার দশটি গল্প নিয়ে বেরিয়েছিল গল্পগ্রন্থ ‘কক্ষপথ’, এবার বেরোল ‘চৈত্রপবনে’, বেরোল ‘স্বপ্নপুরাণ', আপাতত একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ। ‘দেশভাগের গল্প' তার নবতম সংযোজন। ‘ঢিলে প্যান্টের অন্দরমহলে মরশুমি দাদ চুলকোতে চুলকোতে একেবারে টেনিস বল সাইজের হাই তুলল...কার্তিকচন্দ্ৰ।' কিংবা ....গলায় চেন বাঁধা দুই কুকুরের পেছনে কুৎসিত চেহারার একটি লোক এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই পিচরাস্তা আড়মোড়া ভাঙে। যখন সদ্য পাপবিদ্ধ আধডজন ফ্রক রহস্যময় হাসিতে তেতে ওঠে, ডেভিল নামের কুকুরটা পেছনের পা তুলে একাগ্র হয় যখন, অপু তখন বুঝতে পারে একটা অন্ধকার সুর থেকে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার ফড়িং মুহূর্তে তার সমগ্র মস্তিষ্কের দখল নিচ্ছে।'