পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ৯৩ গল্পের নাম 'মাধুরীর স্বপ্নগুলো' এবং ‘অপু ও ফড়িঙেরা' যুগপৎ, দুটি মাত্র উদ্ধৃতি । আপাতত তিনটে মাত্র ছাপানো গল্পের লেখক রাহুল দাস অমিতাভ বচ্চন হতে আসেনি, বরং উচ্চাশায় বিগ বিকে ছাড়িয়ে যেতে চায়, বরাক উপত্যকার গল্প সাম্রাজ্যের দখল নিতে চায়। বিশাল হওয়ার সব লক্ষণই বর্তমান রাহুল দাস-এর কথাভাষায়। উপরের উদ্ধৃতি দুটি তো বরাক উপত্যকার মাপে বিস্ফোরক। গল্পকার রাহুল দাসকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন এক কথাকার এরকম : 'নতুন এক গল্পকার রাহুল দাসের কথা বয়নে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রুক্ষতার মিঠে পাক। সব গাছ ছাড়িয়ে রাহুলই হয়ে উঠবে তৃতীয় ভুবনের জ্যোতিষ্ক। বিরাট তারকা। কথা থাকল।' আসলে এরকম রচনার একটি বড়ো বাধা আমাদের গল্পকারদের অপেশাদারিত্ব। ব্যাঙ্ক চাকুরে ভবিষ্যনিধি পিডব্লিউডি ই এণ্ড ডি ডাক বিভাগের চাকুরে হলে যৌথ পেশাদার কেন হতে পারি না। তাই আমরা পরিচিত একটি কিংবা দুইটি গল্পে, হয়তো একটি সাধারণ সংকলন গ্রন্থেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অনেকের লেখা তো ছোটো কাগজের একটি কিংবা দুটি সংখ্যায় ছাপা হয়েছে, তারপর কাজের চাপে ভুলে গেছেন লেখালেখি । প্রাবন্ধিক তো আর ছোটো পত্রিকার আগারিক নন। তাই একক সংকলনের উপরই নির্ভর করা যায়। লেখককে একান্তে পাওয়াও যায়। ভাবীকালের প্রয়োজনে সংকলন গ্রন্থ বড়ো জরুরি। বই না থাকায় অনেক জরুরি লেখকও থেকে যান আলোচনার বাইরে। পাঠকের দুর্ভাগ্য। শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী নিয়ে লিখতে গেলেই কলম দিক বদল করে। শ্যামলদার গল্প থেকে তার অন্য পরিচয়ে চলে যায়। শ্যামলদা না হলেও বরাক উপত্যকায় বরাক ব্রিজ হত, বিশ্ববিদ্যালয় হত, করিমগঞ্জের শ্যাওলা ও জকিগঞ্জ সীমান্ত হত বরাক নদীও তেমনি কুলুকুলু বয়ে যেত। কিন্তু গালভরা নামের সব গল্পকার হত না। হত না হত না হত না। তাই অনিশ সম্পাদক শ্যামলেন্দু চক্রবর্তীর লালন করা গল্পকার যূথ তখন যে ধারাবাহিকতার শুরু করে গেলেন সেই পাদপ এখন পত্রেপুষ্পে ফলে ছায়ায় পান্থসখা হয়েছে। এমন কি তপোধীর ভট্টাচার্যর মতো আলোচকও কৃতজ্ঞতার কথা বলার পর তার গল্পশরীরে প্রবেশ করেন। শ্যামলেন্দু চক্রবর্তীর গল্পগুলিতেও যে মানুষ শ্যামলদা উপস্থিত। শুধু মানুষ হওয়া, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্প ‘গ্রন্থি' আমাদের দিক নির্দেশ করে বলে দেয় গল্প শুধু একার কথা নয়। সবাইকে নিয়ে সুখে থাকার কথা বলে ছোটোগল্প। জুল ভের্ন ওদেশে আর আমাদের বাংলায় রায় পরিবারেরই অধিকার আছে কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখার। সুকুমার, সত্যজিতের পর কেউ নেই এমত জেনেছি আমরা। অদ্রীশ বর্ধন একটু ঘেটে দিয়েছেন বলেই হয়তো, কিংবা ‘রহস্য’ ‘রোমাঞ্চ’ ও ‘কল্পবিজ্ঞান’ নামে পত্রিকা কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাঁটা পড়ে চর্চার। শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী বরাক উপত্যকায় প্রথম ও শেষ কল্পবিজ্ঞানের গল্প লেখেন শব্দহীন দেশে'। শ্যামলেন্দু চক্রবর্তীর গল্পপাঠ আবশ্যিক হওয়া উচিত এই ভাষাভুবনের শিক্ষাঙ্গনে। 'যে গল্পের শষ নেই' গল্পগ্রন্থের মণিমুক্তোর আসলে নকল নেই একটিও।