পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ৯৪ একটি গল্প লিখেও কেউ কেউ গল্পকার, ওষধি কথার কথাকারকে মনে রাখার জন্য যুক্তি সাজাতে হয়। আমাদের লোভ এমন জিনিস, চৌদ্দটি গল্প পড়ে ও আশ মেটে না, একটি বলে অন্যটিকে দেখ। সংকলনের পরে আশা দৃঢ় হয় আরও লেখা হবে, পড়ব এর পরেও। আশঙ্কাও একটা হয় যখন অনেকদিন পত্র পত্রিকায় অনুপস্থিত থাকেন প্রিয় কথাকার। সংশয়ীমন ভাবে, আর কী লিখবেন না তবে। আমাদের আশঙ্কাকে সত্য করে অনেকদিন লিখছেন না দীপেন্দু দাস। 'বৃত্তের বাইরে' তার একমাত্র গল্প সংকলন। অসাধারণ সব গল্প, যদিও তার স্বাক্ষর গল্পটি বলতে এখনও জানি 'মালতী উপাখ্যান'। দীপেন্দুর মতো নাগরিক জীবন গ্রামীণ জীবন অন্ত্যজ জীবনকে মুখোমুখি এক অসহায়তায় দাঁড় করাতে পারেন নি কেউ। এক উপন্যাসের উপাদান নাটকের উপাদান হেলা ভরে কেন জানি হতে দিলেন না বৃহৎকথা, ছোটোগল্পের বারুদেই ভরে দিলেন অনবদ্য চাঁদ সদাগর'। বহুমুখী গল্পকার দীপেন্দু দাসকে এক সময় মনে হত যৌনতা তার গল্পের মুখ, আবার দেখা গেল সবকিছু ছাপিয়ে মানবিকতাই আসল অবয়ব, দ্বিবাচনিকতার সম্পর্কটাই সব। মানবমনের সমাজমনের অতল খোঁজার চশমাটি দীপেন্দু খুলে রাখবেন না প্লিজ । হিমাশিসের নকশার বইএ গল্প ছিল না। নায়ারণ গঙ্গোপাধ্যায় গৌরকিশোর ঘোষ এককালে যেমন লিখতেন। দেখার চোখ এমন মর্মভেদী হলেই সুখপাঠ্য নক্‌শা আঁকা যায়। গল্পকার হওয়া যায়। হিমাশিসের গল্পের হাত যে এমন মজবুত জানতাম না । জানলাম যখন ছক্কা হাঁকিয়ে দিল। দেশ পত্রিকায় লিখলেই দক্ষ গল্পকার হয় না, কিন্তু হিমাশিস দেখিয়ে দিল দারুণ। বরাকের বন্যা নিয়ে তার কথা বয়নে স্বকীয়তা ছিল, নতুনের আবির্ভাব ছিল। আসামের সন্ত্রাস নিয়ে লেখা অপহরণ গল্পটিও অসাধারণ। অমিতাভ দেব চৌধুরী, সুব্রত কুমার রায়, শুভঙ্কর চন্দ, পার্থপ্রতিম মৈত্র, পরম ভট্টাচার্যদের নিয়ে কিছু লিখতে গেলে ভাবতে হয়। এরা যে প্রস্তুত হয়ে এসেছেন বাংলা ভাষায় লিখবেন বলে। সবচেয়ে ভালো লিখবেন বলে। ওরা সময়ের চেয়ে এগিয়ে বলেই সমসাময়িকদের ঈর্ষার পাত্রও বটে এবং শ্রদ্ধারও যুগপৎ । অমিতাভ কলিকাতায় থাকাকালীন লিখেছেন কলকাতার ছোটো এবং মাঝারি কাগজে। প্রমায় একটি লেখার কপি দিয়েছিলেন আমায়, তখন তার বয়স কম, লেখা পড়ে স্যালুট করেছিলাম, তখন ছিয়াশি। শিলচর যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বীহীন সাম্রাজ্যে একটু হেলা ফেলা করেছেন। কিছু সময় হয়তো দিশাহীন দুরন্তপনায় কেটেছে তার লেখালেখি । কারণ তিনি জানতেন অমিতাভ যা লিখবে তাই লেখা। সলতে পাকানোর সময়টি কলকাতায় কেটেছে বলেই হয়তো মহানাগরিক অনুষঙ্গে সাবলীল তিনি আবার শিকড়ের প্রতি অনুগত একশ শতাংশ। ‘প্রসিদ্ধ রক্ত’ ও দ্বি' তার উল্লেখযোগ্য গল্প। উপন্যাসেও সিদ্ধহস্ত কবি অমিতাভ। নিজের প্রতি দায়বদ্ধতার টানাপোড়েন কাটিয়ে অমিতাভ দেব চৌধুরী এখন উপত্যকার প্রধান লেখক এবং মানবিক মুখ আকাশ যখন একটা, একটি সূর্যকে স্থাপিত করার দায় থাকলে অসহায় হন নির্বাচক। এমনি এক দোটানা ছিল বরাক উপত্যকার শ্রেষ্ঠ গল্পকার নির্বাচনে। শুভঙ্করের গল্পটিও ছিল