আদর। সৃষ্টির প্রায় তাবৎ বস্তুই পুরাতনতা পরিত্যাগ করিয়া নূতন ভাব ধারণ করে। প্রত্যেক বৃক্ষ বৎসরান্তে পুরাতন পত্র পরিত্যাগ করিয়া বসন্তের আগমনে নূতন পত্র ধারণ করে। অতএব কি মনুষ্যজীবনে, কি পৃথিবীতে, নূতনতাই নিয়ম, নূতনতাই সুখ। কিন্তু হে ব্রাহ্ম! এই যে নূতন বৎসর, নূতন সূর্য্য, নূতন চন্দ্র আসিতেছে, চারিদিকে কত নূতন ব্যাপার হইতেছে, এ সকলের মধ্যেও তোমার জীবন কি পুরাতন থাকিবে? তুমি যে ভগ্নগৃহে বাস করিতেছ, তাহা কি নূতন হইবে না? তোমার মনের বার্দ্ধক্য কি দূর হইবে না? সংসারে যত পুরাতন বৃক্ষ ছিল, বসন্তাগমে নূতন পত্র পুষ্পে শোভিত হইল, কিন্তু তোমার ভক্তিলতাতে কি পত্র পুষ্প আসিবে না? যে সমস্ত নদী শুকাইয়াছিল, বর্ষার জলে আবার পূর্ণ হইয়া তাহাদের কেমন শোভা হইল, কিন্তু তোমার পঙ্কিল হৃদয়-তড়াগে কি প্রেমপদ্ম প্রস্ফুটিত হইবে না? সকলের দরিদ্রতা ঘুচিল, ধর্ম্মধন পাইয়া তোমার দারিদ্র্য কি ঘুচিবে না? তুমি জ্ঞানের চর্চ্চা কি কর? তুমি সাম্বৎসরিকের সময় কি সমারোহ কর? যদি তোমার চক্ষে শান্তিবারি বর্ষণ না হইল, যদি তোমার চক্ষু পুণ্যজলে পবিত্র এবং প্রফুল্ল না হইল, তোমার এ সকল আড়ম্বর করিয়া কি লাভ? হে আত্মন্, দেখ, সমুদায় সংসার তোমাকে ভর্ৎসনা করিতেছে। প্রত্যেক কুসুম যাহা প্রাতঃকালে প্রস্ফুটিত হয়, এই বলিয়া তোমাকে তিরস্কার করিতেছে “তুমি এত নূতন ব্যাপার দেখিলে, এত নূতন নূতন চন্দ্রসূর্য্যের কিরণ সম্ভোগ করিলে, তবু তোমার শুষ্ক পুরাতন অন্তর নূতন প্রেম-সৌরভে পূর্ণ হইল না?” পথের তৃণ পর্য্যন্ত নিত্য নূতন বেশ ধারণ করিয়া তোমাকে নিন্দা ও ধিক্কার করিতেছে। যত লোক পুরাতন কুটীর ত্যাগ করিয়া নূতন গৃহে প্রবেশ করিতেছে, তাহারা তোমার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া
পাতা:উপদেশ (প্রতাপচন্দ্র মজুমদার).djvu/৫৮
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
নিত্য নূতনতা।
৪৯
৭