পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
১০০৩

 ট্রাফালগারের যুদ্ধের সময় সেনাপতি নেলসন এইরূপে তাহার দলের জাহাজগুলিকে নিম্নলিখিত সংবাদ দিয়াছিলেন ইংলণ্ড আশা করেন যে, প্রত্যেক লোক তাহার কর্তব্য করিবে। গত রুশ-জাপান যুদ্ধে যেদিন সেনাপতি টোগো রুশিয়ার জাহাজ সকল চুর্ণ করেন, সেদিন তিনিও এই উপায়ে সৈন্যদিগকে বলিয়াছিলেন যে, আজিকার যুদ্ধের উপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।’

 ইহাতে স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে যে ঐরূপ নিশান দিয়া দস্তুর মতন কথাবার্তা চালান যাইতে পারে। জাহাজের সঙ্গে ষ্টেশনের লোকদেরও এই উপায়ে কথাবার্তা চলে। ইহা ছাড়া ঝড় বৃষ্টির অবস্থা জানাইবার জন্য আবার বিশেষ রকমের সংকেত আছে। এ সকল সংকেত বিফল করিয়া দিতে পারে, তাই এজন্য কোনোরূপ কঠিন জিনিস ব্যবহার হয়। জিনিসটি গোল হইলে এক অর্থ, চৌকা হইলে এক অর্থ তিন কোনা হইলে এক অর্থ। আবার ইহাদের একটির সঙ্গে আর একটি মিলাইলে তাহারাই কতরূপ অর্থ হইতে পারে। এইরূপে অতি অল্প কয়েকটি জিনিস দিয়া অনেকরকম কথা বুঝানো যায়। যেমন ভয় নাই।’ ঝড়! বড় বিপদ! সাবধান ইত্যাদি। এই সকল সংকেত দেখিয়া জাহাজের লোকরা পূর্বেই সতর্ক হয়।

 সমুদ্রে যাইবার সময় পথে ঝড় বৃষ্টির অবস্থা কিরূপ হইবে তাহা জাহাজের লোকের চাইতে ডাঙ্গার লোকের বুঝা অপেক্ষাকৃত সহজ। কারণ জাহাজের লোকেরা চারিদিকে কয়েক মাইলের বেশি দেখিতে পায় না। পরিষ্কার দিনে হয়তো জাহাজ ছাড়িল, কিন্তু আর চারি ঘণ্টা পরেই এমন একটা স্থানে গিয়া তাহাদের উপস্থিত হইতে হইবে যেখানে ভয়ানক ঝড় চলিতেছে। জাহাজের লোকের সে স্থানের খবর সংগ্রহ করিবার উপায় নাই। কিন্তু ডাঙ্গার লোকেরা এক স্থানে ঝড়ের সংবাদ পাইলে তৎক্ষণাৎ সকল দেশে তার করিয়া সংবাদ দিতে পারে। এইরূপ কার্যের জন্য রীতিমতো সরকারি অফিস প্রায় সকল স্থানেই আছে। উহাদের কাজ কেবল ঝড় বৃষ্টি আর বায়ু ও আকাশের অবস্থার খবর লওয়া, এবং সর্বত্র সেই খবর দেওয়া। এইরূপে এক জায়গায় ঝড়ের নমুনা হইলে দেখিতে দেখিতে তাহার খবর জাহাজের ষ্টেশনে ষ্টেশনে গিয়া উপস্থিত হয়, আর অমনি সেখানকার লোকেরা তাহা নিশানা লটকাইয়া দেয়। জাহাজের লোকেরা ক্রমাগত ঐ সকল নিশানের প্রতি লক্ষ্য বাখিয়া চলে।

 আলোর দ্বারা অবশ্য এতরকম খবর দেওয়ার ব্যবস্থা নাই তথাপি আলোকটি দেখিলে অন্তত এ কথা বুঝিতে পারা যায়, যে অমুক ষ্টেশনের কাছে আসিয়াছি। এই সকল আলোর লণ্ঠন বিশেষ রকমের। তাহার সামনের কাচখানার গড়ন এমনি, যে তাহাতে ভিতরকার আলোটাকে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতে না দিয়া সোজা সামনের দিকে পাঠাইয়া দেয়। তাহার ফলে অনেক দূর হইতে এই আলো দেখিতে পাওয়া যায়। আতসী কাচের গড়ন যেরূপ, এই লণ্ঠনের কাচের গড়ন কতকটা সেইরূপ, কিন্তু তাহার চাইতে অনেক জটিল।

 পুরীর লণ্ঠনটি অতি সামান্যরকম। কিন্তু এই জাতীয় লণ্ঠন এক একটা খুব বড়-বড় হয়, আর তাহার আলো সাধারণ আলোর চাইতে অনেক বেশি। অনেক স্থলে আবার এরূপ বন্দোবস্ত থাকে যে আলোটি ক্রমাগত না জ্বলিয়া একবার নিভিবে (অথবা লণ্ঠনটি ঘুরিবে, যাহাতে একবার তাহার সামনের দিক, একবার পিছনের দিক দেখা যায়, আর দুর হইতে মনে হয় যেন আলো জ্বলিতেছে আর নিভিতেছে)। এই উপায়ে বিশেষ বিশেষ স্থানের আলো দেখিয়া জাহাজের লোকেরা বুঝিতে পারে যে, উহা অমুক স্থানের আলো। পৃথক স্থানের