পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

আলো জ্বলা নিভার এক একটি বিশেষ হিসাব আছে। কোনোটার সহজ হিসাব; যেমন ‘এত সময়ে এতবার। কোনোটার হিসাব একটু জটিল; যেমন; ‘এতক্ষণ পর পর ক্রমাগত এতবার জ্বলিয়া তারপর এতক্ষণ। এইরূপ অসংখ্য হিসাব হইতে পারে।

 এইসকল আলোর কোনটা কি হিসাবে জ্বলে, জাহাজে জাহাজে তাহার একটা তালিকা থাকে। সেই তালিকা দেখিয়া কোন স্থানের কোন আলো তাহা চিনিয়া লইতে হয়।


আবার পুরীতে

 এবারে আবার পুরী গিয়াছিলাম। দু বৎসর আগে আর একবার যাই। এই দু বৎসরের মধ্যে স্থানটির সমুদ্রের ধারের চেহারা অনেকটা বদলাইয়া গিয়াছে। যেসকল জায়গায় আগে বালি ভিন্ন কিছুই ছিল না, এখন সেখানে অনেকগুলি নূতন বাড়ি হইয়াছে। ইহারই একটি ছোট বাড়িতে আমরা ছিলাম। প্রথমবারের বাড়িটির চেয়ে এ বাটীটি সমুদ্রের অনেক কাছে।

 এ বাড়িতে আসিয়াই কতকগুলি কাঁকড়া আর কুকুরের সহিত পরিচয় হইল। কাঁকড়াগুলি আমাদের উঠানেই থাকিত; বাড়ি হইবার পূর্বে এ সকল জমি তাহাদেরই ছিল। কুকুরগুলি বোধহয় বাড়ি হইবার আগে এখানে আসিয়াছিল। বেচারারা নিতান্তই গরিব। চেহারা দেখিয়া মনে হইল, যেন পেট ভরিয়া আহার তাহাদের অল্পই জোটে; কিন্তু এরূপ কষ্ট এবং অযত্নের মধ্যে থাকিয়াও তাহাদের স্বভাবের মিষ্টতা হারায় নাই। প্রথমে ইহাদ্রে একটিই ঐ বাড়িতে ছিল, সুতরাং প্রথম পরিচয় তাহার সঙ্গেই হয়। জীর্ণ শীর্ণ অস্থি-চর্মসার শরীরটিতে যেমন একদিকে তাহার দারিদ্র্যের লক্ষণ দেখা গেল, তেমনি লম্বা লম্বা হাত-পা, লম্বা লেজ এবং স্নিগ্ধ মুখশ্রীতে তাহার ভদ্রতার আভাসও ছিল। সেই লম্বা লেজটি নাড়িয়া সে আমাদিগকে অভ্যর্থনা করিল। আমরা অল্প কয়টি লোক, আমাদের পাতের ভাতে ভালো করিয়া তাহার পেট ভরিত কিনা সন্দেহ, কিন্তু তাহার জন্যই সে যথেষ্ট কৃতজ্ঞ হইয়া সমস্ত রাত্রি আমাদের বাড়িতে পাহারা দিত।

 ক্রমে আর দুটি কুকুর আসিয়া জুটিল। ইহাদের একটা একটু বুনোগোছে ছিল, ভদ্রতার ধার বড় একটা ধারিত না। শিশুকালে কে তাহার লেজ কাটিয়া দিয়াছিল, এখন তাহার তিন আঙ্গুল মাত্র অবশিষ্ট আছে। আমরা ঘনিষ্ঠতা করিতে গেলে সে ঐ তিন আঙ্গুল লেজটুকুই গুটাইয়া অবিশ্বাস প্রকাশ করিত। অন্যান্য কুকুরগুলির তুলনায় ইহার মনটাও একটু কুটিল ছিল বলিয়া বোধহয়; কিন্তু আমাদের সঙ্গে সে কোনোরূপ মন্দ ব্যবহার করে নাই।

 তারপর আবার একটা মস্ত কুকুর আসিল। যতদিন কেবল আমরাই ছিলাম ততদিন তাহাকে দূরে দূরে দেখিতে পাইতাম বটে, কিন্তু সে আমাদের কাছে বড় একটা ঘেঁষিত না। কিন্তু যখন আমাদের বাড়িতে ছোট-ছোট ছেলেরা আসিল, তখন দেখি যে কুকুরটা আসিয়া তাহাদের সঙ্গে বন্ধুতা করিয়া বসিয়াছে। ছেলেদের সঙ্গে সে এমনি উৎসাহ করিয়া খেলিত যে, একদিন লাফ দিয়া তাহাদের মাথার উপর দিয়াই চলিয়া গেল।

 এই কুকুরগুলিকে ছাড়িয়া আসিতে কষ্ট বোধ হইয়াছিল। আসিবার পূর্বে তাহাদের যথেষ্ট ভাত আর মাছ রান্না করিয়া তাহাদিগকে নিমন্ত্রণ খাওয়াইলাম। খাইবার সময় তিনটি কুকুর আসিয়া উপস্থিত হইল, বড় কুকুরটাকে খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। এত খাবার বোধ হয় আর