মহারাজা সায়াজী রাও গাইকোয়াড়
আজ তোমাদিগকে ভারতের এক স্বাধীন নৃপতির জীবনের কথা বলিব। (বর্তমান কালের আমাদের দেশে যে সমুদয় মহানুভব ব্যক্তি জীবিত আছে, ইনি তাঁহাদের মধ্যে একজন।) রাজ ঐশ্বর্যের মধ্যে প্রতিপালিত হইয়া ইনি যে প্রকার প্রকৃত মনুষ্যত্ব ও মহত্ত্বে অগ্রসর হইয়াছেন, সচরাচর তেমন দেখা যায় না। উপরে উপরে দেখিলে মনে হইতে পারে, যাহারা ধনৈশ্বর্যের মধ্যে বর্ধিত তাহাদের পক্ষে মহৎ জীবন লাভ করা সহজ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় যে ধনী অপেক্ষা দরিদ্র শ্রেণীর মধ্য হইতেই জগতের অধিকাংশ মহাজন উদ্ভূত হইয়া থাকেন। ইহার কারণ নির্দেশ করাও কঠিন নহে। সংগ্রামে বিপদে ও পরীক্ষায় মানব চরিত্রের গূঢ় শক্তি সকলের বিকাশ হয়। সম্পদের ক্রোড়ে যাঁহারা লালিত, প্রায়ই ভোগবিলাসের তরঙ্গে তাহাদের হৃদয়ের উচ্চ ভাবসকল ভাসিয়া যায়। সকল দেশেই ধনী ও সম্পদশালী লোকদের মধ্যে প্রকৃত মহত্ত্ব বিরল। বিশেষত ভারতবর্ষে ধন এবং মহত্ত্বের একত্র সমাবেশ অতি অল্পই দেখা যায়। বরোদার বর্তমান গাইকোয়াড় মহারাজা সায়াজী রাওয়ের জীবনে কিন্তু এই উভয়ের সুন্দর সম্মিলন হইযাছে। একদিকে তিনি যেমন রাজা, বংশগৌরবে অতি উচ্চস্থান অধিকার করিয়া রহিয়াছেন, অপরদিকে জ্ঞানে তিনি তৃতীয় স্থানীয়। কিন্তু সেজন্য তাহার মহত্ত্ব নহে। তাহাব সমকক্ষ গুণে এবং চরিত্রের প্রভাবে তিনি সর্বজনপ্রিয়। ভারতের রাজন্যগণের মধ্যে এবং তাহার অপেক্ষা সমৃদ্ধিশালী রাজা তো অনেকে আছে। আপন আপন রাজ্যের বাহিরে তাঁহাদিগের নাম অধিক শুনা যায় না। কিন্তু বরোদার মহারাজা সায়াজী রাও-এর নাম ভারতের সর্বত্র সুবিখ্যাত। সম্প্রতি তাঁহার রাজ্যারোহণের পঞ্চবিংশ বাৎসরিক উৎসব হইয়া গিয়াছে। তাহাতে সকল প্রদেশের লোক আনন্দ প্রকাশ কবিয়াছে। তিনি বাস্তবিকই আদর্শ নরপতি। বিধাতা তাহাকে যে উচ্চপদ দিয়াছেন, প্রচুর ধনৈশ্বর্য এবং শক্তি দিয়াছেন এ সমুদয়ই তিনি আপনার প্রজা এবং সমগ্র ভারতবাসীর কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করিয়াছেন। অন্যান্য রাজাদের ন্যায় ভোগবিলাসে, আমোদ প্রমোদে, আলস্য বা ইংরাজ রাজপুরুষদের তোষামোদে তাহার সময় অতিবাহিত হয় না। তিনি প্রতিদিন নিয়মিতরূপে, পাঠ আলোচনা, রাজকার্য পরিদর্শন এবং জনহিতকর কার্যে যাপন করেন। সাহিত্য, শিল্প, দর্শন ও বিজ্ঞানে তিনি সুপণ্ডিত। তাঁহার মত বিচক্ষণ ব্যক্তি বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে কম আছে। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে তিনি বহু চিন্তা করিয়াছেন এ সকল বিষয়ে তিনি অনেক সময়ে বক্তৃতা করিয়া থাকেন। ভারতবাসিগণ তাহাকে আপনাদের একজন প্রধান নেতা বলিয়া মনে করেন। আর তিনিও আপনাকে একজন বলিয়া মনে করেন। তিনি অনেক সময়ে বলিয়াছে যে আমরা সকলেই এক ভারতমাতা সন্তান। তাঁহার বেশভূষায় বা ব্যবহারে, কোনোপ্রকার আড়ম্বর নাই। অতি সামান্য পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া সামান্য লোকের মতো তিনি সকলের সঙ্গে মিশিয়া থাকেন। তাহার আচরণে পদৈশ্বর্যজনিত গর্বের লেশমাত্র দৃষ্ট হয় না।
আমাদের দেশের সকলপ্রকার জনহিতকর কার্যের সঙ্গে তাহার পূর্ণ সহানুভূতি আছে। এবং যাহা ভালো বুঝিয়াছেন, কাহারো দিকে দৃকপাত না করিয়া তিনি তাহা করিয়া যান। অনেকবার তিনি জাতীয় মহাসমিতিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। রাজন্যবর্গের কথা দূরে থাক, অনেক ক্ষুদ্র জমিদারেরা পর্যন্ত গবর্ণমেণ্টের ভয়ে অনেক সময়ে এইসকল সভায় উপস্থিত