পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

খড়গ প্রভৃতি অস্ত্র লইয়া গর্জন করিতে করিতে তাহাদের সঙ্গে চলিল। আকাশে দেবতারা ছুটিয়া দেখিতে আসিলেন, এবারে কী ভয়ানক যুদ্ধ হয়!

 এদিকে রামও সীতাকে লক্ষ্মণের সঙ্গে একটা পর্বতের গুহায় লুকাইয়া রাখিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছেন। রাক্ষসেরা গর্জন করিতে করিতে আসিয়া রামের উপর প্রাণপণে অস্ত্র ছুঁড়িতে লাগিল। কিন্তু রাম এমনই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করিলেন যে, তাঁহার সম্মুখে তাহারা কিছুতেই টিকিতে পারিল না। রামের বাণে তাহাদের হাতি, ঘোড়া, লোকজন যত ছিল সকলই একেবারে খণ্ড-খণ্ড হইয়া গেল।

 কখন খরের ভাই দূষণ বড়ই রাগের সহিত যুদ্ধ করিতে আসিল। কিন্তু সে যে কেমন যুদ্ধ করিয়াছিল, তাহা আর বলিয়া কী হইবে। প্রথমেই তো রামের বাণে তাহার ঘোড়া গেল, সারথি গেল, ধনুক গেল। তখন সে লইল একটা পরিঘ। অমনি সেই পরিঘ-শুদ্ধ তাহার হাত দুটা কাটা গেল। তখন বেচারা মরিয়া গেল। তারপর আর তিনটা রাক্ষস আসিয়া ভালমতে যুদ্ধ আরম্ভ করিতে না করিতেই মরিয়া গেল।

 একলা রাম যুদ্ধ করিয়া চৌদ্দ হাজার রাক্ষসকে মারিলেন। অবশিষ্ট রহিল কেবল খর আর তাহার পুত্র ত্রিশিরা; ত্রিশিরা অতি অল্পক্ষণই যুদ্ধ করিয়াছিল; শেষে রহিল শুধু খর।

 খর ভয়ানক যুদ্ধ জানিত। সে প্রথমে খুব তেজের সহিত যুদ্ধ করিয়া রামের ধনুক আর বর্ম কাটিয়া ফেলিল। কিন্তু রাম তখনই সেই অগস্ত্য মুনির ধনুকখানি লইয়া, ক্রমে তাহার রথ,সারথি, ঘোড়া, ধনুক সব চুরমার করিয়া দিলেন। তখন খরের এক গদা মাত্র বাকি, তাহাও কাটিতে রামের অধিক সময় লাগিল না। গদা কাটা গেলে খরের হাতে আর একখানিও অস্ত্র রহিল না। কিন্তু তাই বলিয়া তাহার তেজ যে কিছুমাত্র কমিল, তাহা নহে। অস্ত্র ফুরাইলে সে শালগাছ লইয়া যুদ্ধ করিল। শালকাছ কাটা গেলে, শুধু হাতেই মারিতে আসিল। শেষে রাম তাহার বুকে এক বাণ মারিয়া তাহার প্রাণ বাহির করিয়া দিলেন।

 জনস্থানের যত রাক্ষস প্রায় সকলকেই রাম মারিয়া শেষ করিলেন। বাকি রহিল খালি অকম্পন নামে একটা। অকম্পন পলাইয়া লঙ্কায় গিয়া রাবণকে বলিল, ‘মহারাজ, জনস্থানের যত রাক্ষস ছিল সকলই মরিয়া গিয়াছে। কেবল আমিই অনেক কষ্টে পলাইয়া আসিয়াছি।’ তাহা শুনিয়া রাবণ আশ্চর্য হইয়া বলিল, ‘সে কী কথা অকম্পন! তাহারা কী করিয়া মরিল?’

 অকম্পন বলিল, ‘মহারাজ, অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রাম তাহাদিগকে মারিয়াছে। রাম যে কত বড় বীর তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। সে একাই জনস্থান নষ্ট করিয়াছে। তাহার সঙ্গে আবার তাহার এক ভাই আছে, সেটার নাম লক্ষ্মণ।’

 এ কথা শুনিয়া রাবণের রাগের আর সীমা রহিল না। সে তখনই রাম লক্ষ্মণকে মারিবার জন্য জনস্থানে যাইতে চাহিল। কিন্তু অকম্পন তাহাতে বাধা দিয়া বলিল, ‘মহারাজ কি রামকে যেমন-তেমন বীর ভাবিয়াছেন? আপনার সমস্ত রাক্ষস লইয়া গেলেও তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া পারবেন না। তবে, তাহাকে মারিবার একটা উপায় আছে। রাম তাহার স্ত্রী সীতাকে আনিয়াছে। সীতা এতই সুন্দর যে, তেমন আর কেহ দেখে নাই। আপনি যদি রামকে ফাঁকি দিয়া এই সীতাকে ধরিয়া আনিতে পারেন, তবে সেই দুঃখে রাম আপনিই মরিয়া যাইবে।’ তাহা শুনিয়া রাবণ বলিল, ‘আমি আজই যাইতেছি।’

 এই বলিয়া সে, তাহার গাধায় টানা ঝকঝকে রথখানিতে চড়িয়া, সেই তাড়কার পুত্র