পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের রামায়ণ
১১৫

মারীচের নিকট গিয়া উপস্থিত হইল। মারীচ তাহাকে দেখিয়া বলিল, ‘মহারাজ যে এমন তাড়াতাড়ি করিয়া একলাটি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। ব্যাপারখানা কী?’

 রাবণ বলিল, ‘দশরথের ছেলে রাম জনস্থানের রাক্ষসদিগকে মারিয়া ফেলিয়াছে। তাই আমি তাহার স্ত্রী সীতাকে ধরিয়া আনিতে যাইতেছি।’ মারীচ বলিল, ‘মহারাজ, এরূপ বুদ্ধি আপনাকে কে দিয়াছে? আপনি এইবেলা লঙ্কায় ফিরিয়া যাউন। রামের হাতে পড়িলে আপনার আর রক্ষা থাকিবে না!’

 তাহা শুনিয়া রাবণ লঙ্কায় ফিরিয়া আসিল। আসিয়াই দেখিল, সূর্পণখা, তাহার নাক কান কাটা। জনস্থানে রাক্ষসেরা মারা গেলে পর হতভাগী চ্যাঁচাইতে চ্যাঁচাইতে লঙ্কায় চলিয়া আসিয়াছে।

 সূর্পণখার কথা শুনিয়া রাবণ আবার মারীচের কাছে ফিরিয়া গেল। এবারে আর সে তাহার কোন কথাই শুনিল না। সে বলিল, ‘মারীচ, আমার এ কাজটি করিয়া না দিলেই নয়। তুমি রামের আশ্রমে গিয়া, সোনার হরিণ সাজিয়া সীতার সম্মুখে নাচিয়া বেড়াইবে। তোমাকে দেখিলে নিশ্চয় সীতা তোমাকে ধরিবার জন্য রাম লক্ষ্মণকে পাঠাইয়া দিবে। রাম লক্ষ্মণ আশ্রমের বাহিরে চলিয়া গেলে আর সীতাকে ধরিয়া আনিতে কিসের ভয়!’

 মারীচ ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে জোড়হাতে বলিল, ‘মহারাজ, এক সময় আমার গায় হাজার হাতির জোর ছিল। আমি মনের সুখে দণ্ডকবনের মুনিদিগকে ধরিয়া খাইতাম, আর তাহাদের যজ্ঞ নষ্ট করিয়া বেড়াইতাম। আমি বিশ্বামিত্রের যজ্ঞ নষ্ট করিতে গেলাম, আর এই রাম ধনুক লইয়া আমাকে আটকাইতে আসিল। তখন সে ছোট্ট ছেলেমানুষ ছিল। আমি মনে করিলাম, ঐটুকু মানুষ আমার কী করিবে! কিন্তু সেই ঐটুকু মানুষই এমন এক বাণ আমাকে মারিল যে, আমি তাহার চোটে অজ্ঞান হইয়া এক সমুদ্রের জলে আসিয়া পড়িলাম। এমন লোকের সঙ্গে কি ঝগড়া করিতে যাইতে হয়? তাহার তো কিছু করিতে পারিবেনই না, মাঝখান হইতে আপনার প্রাণটি যাইবে।’

 ঔষধ তিক্ত হইলে যেমন তাহা খাইতে ভাল লাগে না, মারীচের কথাও রাবণের কাছে সেইরূপ ভাল লাগিল না। সে বলল, ‘একাজ তোমায় করিতেই হইবে। সোনার হরিণ, তাহার গায়ে রূপার চক্র, এমনি সাজ ধরিয়া তুমি সীতার সামনে গিয়া খেলা করিতে থাক। এমন হরিণটি দেখিলেই সীতা ভুলিয়া যাইবে, আর তোমাকে ধরিবার জন্য রামকে না পাঠাইয়া থাকিতে পরিবে না। রাম তোমার পিছনে পিছনে অনেক দূর আসিলে পর, তুমি রামের মতন গলায় চ্যাঁচাইবে, “হায় সীতা! হায় লক্ষ্মণ!” সে শব্দ শুনিলে, লক্ষ্মণ কি আর ঘরে বসিয়া থাকিতে পারিবে? তাহাকে আশ্রম ছাড়িয়া রামের কাছে আসিতেই হইবে। তখন আর সীতাকে কে রাখে? মারীচ, এ কাজটি করিয়া দিলে আমার অর্ধেক রাজ্য তোমার। আর যদি না কর, তবে এখনি তোমার মরণ!’

 কাজেই তখন আর বেচারা কী করে? রাবণের সঙ্গে সেই রথে চড়িয়া তাহাকে আসিতে হইল। সীতা তখন সাজি হাতে করিয়া ফুল তুলিতেছিলেন। এমন সময় সেই দুষ্ট রাক্ষস সোনার হরিণ সাজিয়া তাঁহার সামনে আসিয়া খেলা করিতে লাগিল। তাহা দেখিয়া সীতা রাম লক্ষ্মণকে ডাকিলেন!

 সোনার হরিণ দেখিয়াই লক্ষ্মণ বলিলেন, ‘দাদা, হরিণ কি কখনও সোনার হয়? এটা নিশ্চয়