পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 কিন্তু কী করিয়া সীতার খবর পাওয়া যাইবে? একশত যোজন সমুদ্র ডিঙাইতে পারিলে তবে তো লঙ্কা! আর সেই লঙ্কায় গেলে তবে তো সীতার সন্ধান হয়। বানরেরা সমুদ্রের ধারে আসিয়া অবাক হইয়া বসিয়া রহিল। এত বড় সমুদ্র পার হইয়া সীতার সংবাদ আনা বড়ই কঠিন দেখা যাইতেছে। এ কাজ কে করিবে?

 তখন অঙ্গদ বলিল, ‘তোমরা তো সকলেই খুব বীর। বল দেখি ভাই কে কত দূর লাফাইতে পার?'

 অঙ্গদের কথা শুনিয়া তার বলিল, ‘আমি দশ যোজন লাফাইতে পারি।’ গবজাক্ষ বলিল, ‘আমি কুড়ি যোজন পারি।’ শরভ বলিল, ‘আমি ত্রিশ যোজন পারি।’ ঋষভ বলিল, ‘আমি চল্লিশ যোজন পারি।’ গন্ধ মাদন বলিল, ‘আমি পঞ্চাশ যোজন পারি।’ মৈন্দ বলিল, ‘আমি ষাট যোজন পারি।’ দ্বিবিদ বলিল, ‘সত্তর যোজন পারি।’ সুষেণ বলিল, ‘আশি যোজন পারি।’ জাম্ববান বলিল, ‘নববই যোজন পারি।’ সকলের কথা শুনিয়া অঙ্গদ বলিল, ‘আমি একশত যোজন সমুদ্র ডিঙাইতে পারি; কিন্তু ফিরিয়া আসিতে পারিব কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ হইতেছে।’

 তখন জাম্ববান বলিল, ‘রাজপুত্র তুমি ইচ্ছা করিলে এক হাজার যোজন পার হইতে পার, কিন্তু নিজে তাহা করিতে যাইবে কেন? তুমি হুকুম দিবে, আমরা কাজ করিব। যে এ কাজের যোগ্য লোক, আমি তাহাকে ঠিক করিয়া দিতেছি।’

 এই বলিয়া সে হনুমানকে বলিল, ‘বাপু হনুমান, তুমি যে এত বড় বীর হইয়া এমন চুপ করিয়া এক পাশে বসিয়া আছ, তাহার কারণ কী? তুমি তো যেমন-তেমন লোক নহ!’

 বাস্তবিকই হনুমান যেমন-তেমন লোক ছিল না। যখন হনুমানের জন্ম হয়, তখন সূর্য উঠিতেছিল। লাল সূর্য দেখিয়া সে মনে করিল, বুঝি তাহা কোনরূপ ফল। তাই সে লাফাইয়া তাহা ধরিতে গেল। সূর্যের তেজে তাহার কিছুই হয় নাই, কিন্তু ইন্দ্র তাহাকে দেখিয়া বজ্র ছুঁড়িয়া মারিলেন। বজ্র খাইয়াও সে মরিল না, কেবল পর্বতের উপরে পড়িয়া তাহার বাঁ পাশের হনু অর্থাৎ দাড়ি ভাঙিয়া গেল। সেইজন্য তাহার নাম হইল হনুমান।

 হনুমান পবন দেবতার পুত্র। ইন্দ্র হনুমানকে বজ্র মারাতে পবন রাগ করিয়া সমস্ত বাতাস বন্ধ করিয়া দিলেন। তাহাতে সংসারে লোক নিশ্বাস ফেলিতে না পারিয়া অস্থির হইয়া উঠিল। তখন দেবতারা দেখিলেন বড় বিপদ! কাজেই তাঁহারা পবনকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য হনুমানকে বর দিলেন। ব্রহ্মা বলিলেন, ‘কোন অস্ত্রে হনুমানের মৃত্যু হইবে না।’ ইন্দ্র বলিলেন, ‘তাহার নিজের ইচ্ছা ভিন্ন কিছুতেই তাহার মৃত্যু হইবে না।’

 বড় হইয়া হনুমান অসাধারণ বীর হইয়াছে। সে যেখানে ইচ্ছা সেইখানেই যাইতে পারে, কিছুতেই তাহাকে আটকায় না। সেই হনুমানকে ডাকিয়া এখন জাম্ববান বলিল, ‘বাছা, তুমি এ কাজটি করিলে আমাদের প্রাণ বাঁচে।’

 তখন হনুমান বলিল, ‘ঐ যে মহেন্দ্র পর্বত দেখা যাইতেছে, উহা খুব উঁচু আর মজবুত। ঐ স্থান হইতে লাফাইবার সুবিধা হইবে।’ এই কথা বলিয়া সে মহেন্দ্র পর্বতে গিয়া উঠিল।

 মহেন্দ্র পর্বত দেখিতে খুব সুন্দর, আর বড়ও কম নহে। তাহাতে বড় বড় বন আছে, ঝরঝর শব্দে কত ঝরনা বহিতেছে, পাখিরা গাছে বসিয়া মনের সুখে গান গাহিতেছে। আর বাঘ, সিংহ, হাতি প্রভৃতি জানোয়ারেরা দলে দলে বনের ভিতর চরিয়া বেড়াইতেছে। হনুমানের