পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এমন সময়ে ত্রিজটা নামে এক বুড়ী রাক্ষসী সেখানে আসিয়া বলিল, ‘তোমরা সীতাকে কষ্ট দিও না। আজ আমি বড় ভয়ানক স্বপ্ন দেখিয়াছি। বোধহয় রাবণ মরিয়া যাইবে আর লঙ্কাও ছারখার হইবে। তোমরা সীতাকে বকিয়াছ, এখন ইহার পায়ে ধরিয়া ক্ষমা চাহ। তাহা হইলে হয়ত তিনি তোমাদিগকে ক্ষমা করিবেন।’

 সীতা বলিলেন, ‘ত্রিজটা, তোমার কথা সত্য হইলে আমি তোমাদিগকে ক্ষমা করিব।’ এই কথা বলিয়া তিনি আবার কাঁদিতে লাগিলেন। তারপর সেই শিংশপা গাছের নিকটে আসিয়া, এক হাতে গাছের ডাল ধরিয়া আর এক হাতে মাথার বেণী লইয়া বলিলেন, এই বেণী গলায় বাঁধিয়া মরিব।'

 হনুমান শিংশপা গাছে বসিয়া সবই দেখিয়াছে আর মনে মনে ভাবিতেছে কি করিয়া সীতাকে একটু শান্ত করিবে। চারিদিকে রাক্ষসীর দল, সীতার কাছে গেলে তাহারা নিশ্চয়ই দেখিতে পাইবে। কিন্তু যদি শীঘ্র তাঁহার সহিত কথা বলা না হয়, তবে হয়ত তিনি তাহার পূর্বেই মরিয়া যাইবেন! আবার, কথা কহিতে গেলে, যদি রাবণ মনে করিয়া তিনি চিৎকার করিয়া উঠেন, তবে সকল দিকই মাটি হয়। কাজেই এমন করিয়া কথা কহিতে হইবে, যাহাতে তিনি ভয় না পান।

 এই ভাবিয়া সে সীতার আর একটু কাছে আসিয়া, আস্তে আস্তে মিষ্ট কথায় বলিতে লাগিল, মহারাজ দশরথের পুত্র রামচন্দ্র বনে আসিয়াছিলেন। সঙ্গে ছিলেন লক্ষ্মণ ঠাকুর আর মা সীতা। দুষ্ট রাবণ রামকে ফাঁকি দিয়া সীতাকে লইয়া আসিল। রাম তাঁহাকে খুঁজিতে খুঁজিতে আসিয়া সুগ্রীবের সহিত বন্ধুতা করিলেন। তারপর সীতার সন্ধান করিবার জন্য সুগ্রীব আমাদিগকে পাঠাইলেন। কত দেশে, কত বনে আমরা সীতা মাকে খুঁজিয়াছি। শেষে সম্পতি পাখির কথায় সাগর পার হইয়া, এখানে আসিয়া বুঝি মায়ের দেখা পাইলাম!’ এই বলিয়া হনুমান চুপ করিল।

 হনুমানের কথায় সীতা আশ্চর্য হইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন। দেখিলেন, একটি নিতান্ত ছোট বানর গাছের ডালে বসিয়া তাঁহাকে নমস্কার করিতেছে। তাহার গায়ের রঙ অশোক ফুলের মত লাল, চোখ সোনালী, পরনে সাদা কাপড়। ইহা দেখিয়া প্রথমে সীতার বড় ভয় হইল। কিন্তু শেষে অনেক ভাবিয়া তিনি বলিলেন ‘হে দেবতা বৃহস্পতি, হে ব্রহ্মা, হে ইন্দ্র হে অগ্নি, দোহাই আপনাদের! এই বানর যাহা বলিতেছে তাহা সত্য হউক!’

 তখন হনুমান গাছ হইতে নামিয়া সীতাকে প্রণাম করিয়া বলিল, ‘আপনি কে মা? কেনই বা এই বনে থাকিয়া এত দুঃখ করিতেছেন? আপনি যদি রামের সীতা হন, তবে আমার কথার উত্তর দিন।’ এই কথা শুনিয়া সীতা বলিলেন, ‘আমি রাজা দশরথের পুত্রবধূ। আমার পিতার নাম জনক, স্বামী রামচন্দ্র। বিমাতার কথায় রাম বনে আসিয়াছিলেন; আমি আর লক্ষ্মণ তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছিলাম। সেখান হইতে দুষ্ট রাবণ আমাকে ধরিয়া লঙ্কায় আনিয়াছে। দুই মাস পরে আমাকে মারিয়া ফেলিবে।’

 হনুমান সীতার সহিত ভাল করিয়া কথা কহিবার জন্য একটু একটু করিয়া কাছে আসিতে লাগিল। কিন্তু তাহাতে আবার সীতা ভয় পাইয়া বলিলেন, ‘হায় ইহার সহিত কেন কথা বলিলাম? এ হয়ত সেই দুষ্ট রাবণই বানর সাজিয়া আসিয়াছে।’

 তাহা শুনিয়া হনুমান জোড়হাতে তাঁহাকে অনেক বুঝাইল। রামের সহিত কেমন করিয়া তাহার পরিচয় হইয়াছে রাবণ সীতাকে লইয়া আসিবার পর রাম কি করিয়া দিন কাটাইতেছেন,