পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
টুনটুনির বই
১৫

 শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, ‘কি, এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে ভেজে খাই!’

 যেই বলা, অমনি লোক গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে। রাজা তাকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, ‘এই পাখিটাকে ভেজে আজ আমাকে খেতে দিতে হবে!’

রানীরা টুনটুনীকে দেখছেন

বলে তো রাজা চলে এসেছেন, আর রানীরা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।

একজন বললেন, ‘কি সুন্দর পাখি! আমার হাতে দাও তো একবার দেখি।’ বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা দেখে আবার একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর-একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি ফস্‌কে গিয়ে উড়ে পালাল।

কি সর্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রক্ষা থাকবে না।

এমনি করে তাঁরা দুঃখ করছেন, এমন সময় ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থপ-থপ করে যাচ্ছে।

সাত রানী তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, ‘চুপ চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে। এইটেকে ভেজে দি, আর রাজামশাই খেয়ে ভাববেন টুনটুনিই খেয়েছেন!’

সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে দিলে তিনি খেয়ে খুশি হলেন। তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, ‘এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।’

অমনি টুনি বলছে—

‘বড় মজা, বড় মজা,
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!’

শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন। তখন তিনি থুতু ফেলেন, ওয়াক তোলেন, মুখ ধোন, আরো কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, ‘সাত রানীর নাক কেটে ফেল।’

অমনি জল্লাদ গিয়ে সাত রানীক নাক কেটে ফেললে।

তা দেখে টুনটুনি বললে—

‘এই টুনিতে টুনটুনাল
সাত রাণীর নাক কাটাল!’

 তখন রাজা বললেন, ‘আন বেটাকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!’