পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
টুনটুনির বই
১৯

 তখন বাঘ তো শিয়ালকে বেশ করে লেজের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছে, আর শিয়াল ভাবছে, ‘এবার আর বাঘমামা আমাকে ফেলে পালাতে পারবে না।’

 এমনি করে তারা দুজনে শিয়ালের গর্তের কাছে এল। ছাগলছানা দূর থেকেই তাদের দেখতে পেয়ে শিয়ালকে বললে—

‘দূর হতভাগা! তোকে দিলুম দশ বাঘের কড়ি,
এক বাঘ নিয়ে এলি লেজে দিয়ে দড়ি!’

শুনেই তো ভয়ে বাঘের প্রাণ উড়ে গিয়েছে। সে ভাবলে যে, নিশ্চয় শিয়াল তাকে ফাঁকি দিয়ে নরহরি দাসকে খেতে দেবার জন্য এনেছে। তারপর সে কি আর সেখানে দাঁড়ায়! সে পঁচিশ হাত লম্বা এক এক লাফ দিয়ে শিয়ালকে সুদ্ধ নিয়ে পালাল। শিয়াল বেচারা মাটিতে আছাড় খেয়ে, কাঁটার আঁচড় খেয়ে, খেতের আলে ঠোক্কর খেয়ে একেবারে যায় আর কি! শিয়াল চেঁচিয়ে বললে, ‘মামা, আল! মামা, আল!’ তা শুনে বাঘ ভাবে বুঝি সেই নরহরি দাস এল, তাই সে আরো বেশি করে ছোটে। এমনি করে সারারাত ছুটোছুটি করে সারা হল।

সকালে ছাগলছানা বাড়ি ফিরে এল।

শিয়ালের সেদিন ভারি সাজা হয়েছিল। সেই থেকে বাঘের উপর তার এমনি রাগ হল যে, সে রাগ আর কিছুতেই গেল না।


বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নে

 শিয়াল ভাবে, ‘বাঘমামা, দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি!’ এখন সে আর নরহরি দাসের ভয়ে তার পুরনো গর্তে যায় না, সে একটা নতুন গর্ত খুঁজে বার করেছে।
বাঘ কুয়োর ভিতর পড়ে যাচ্ছে
 সেই গর্তের কাছে একটা কুয়ো ছিল।

 একদিন শিয়াল নদীর ধারে একটা মাদুর দেখতে পেয়ে, সেটাকে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে এল। এনে, সেই কুয়োর মুখের উপর তাকে বেশ করে বিছিয়ে বাঘকে গিয়ে বলল, ‘মামা, আমার নতুন বাড়ি দেখতে গেলে না?’ শুনে বাঘ তখনি তার বাড়ি দেখতে এল। শিয়াল তাকে সেই কুয়োর মুখে বিছানো মাদুরটা দেখিয়ে বললে, ‘মামা, একটু বস, জলখাবার খাবে।’

 জলখাবারের কথা শুনে বাঘ ভারি খুশি হয়ে, লাফিয়ে সেই মাদুরের উপর