পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 অমন ভীষণ স্থানে না থাকাই ভালো, আর বোধ হইল যেন কাছেই নগর আছে। সুতরাং রাক্ষস মারিবার পরেই পাণ্ডবেরা তাড়াতাড়ি সে স্থান ছাড়িয়া চলিলেন। হিড়িম্বাও তাঁহাদের সঙ্গে চলিল।

 হিড়িম্বাকে সঙ্গে আসিতে দেখিয়া ভীম বলিলেন, রাক্ষসেরা বড়ই দুষ্ট উহাদিগকে বিশ্বাস করিতে নাই। তোর ভাইকে মারিয়াছি, আয়, তোকে মারি!'

 এ কথায় যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘ছি ভীম! এমন কাজ করিতে নাই। স্ত্রীলোককে মারা বড় পাপ।’

 ভীমের রাগ দেখিয়া হিড়িম্বা নিতান্ত দুঃখের সহিত জোড়হাতে কুন্তীকে বলিল, ‘মা, আমার কোনো দোষ নাই। আপনার ভীমকে আমি প্রাণের চেয়েও ভালোবাসি, আর আশা করিয়াছিলাম, তিনি আমাকে বিবাহ করিবেন। আমাকে রক্ষা করুন৷’

 তখন যুধিষ্ঠির বলিলেন, ‘ঠিক কথা। ভীম! তোমার ইহাকে বিবাহ করা উচিত।’

 ততক্ষণে ভীমের রাগ চলিয়া গিয়াছে, আর দাদার কথা তিনি কখনো অমান্য করেন না। কাজেই তিনি হিড়িম্বাকে বিবাহ করিলেন৷

 ভীম আর হিড়িম্বার ঘটোৎকচ নামক এক পুত্র হইয়াছিল, তাহার কথা আরো শুনিতে পাইবে। ঘটোৎকচ ধার্মিক, বিদ্বান আর অসাধারণ বীর ছিল। জন্মমাত্রেই ঘটোৎকচ বড় মানুষের মতন করিয়া ভীমকে বলিল, ‘বাবা, এখন যাই। দরকার হইলে, যখন ডাকিবেন তখনই আসিব।’ এই বলিয়া সে সকলকে প্রণাম করিয়া তাহার মায়ের সহিত উত্তর দিকে চলিয়া গেল৷

 তারপর পাণ্ডবেরা গাছের ছাল পরিয়া আর মাথায় জটা পাকাইয়া তপস্বীর বেশে বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। হরিণ শিকার করিয়া খাওয়া, বেদ উপনিষৎ প্রভৃতি পড়া, আর মায়ের সেবা করা, ইহাই তখন তাঁহাদের প্রধান কাজ ছিল। এইরূপে মৎস্য, ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল, কীচক প্রভৃতি নানা দেশে ঘুরিয়া শেষে একদিন তাঁহারা ব্যাসদেবকে দেখিতে পাইলেন। ভীষ্ম যেমন ইহাদের ঠাকুরদাদা, ব্যাসও তেমনি। কাজেই পাণ্ডবদিগকে ব্যাস অনেক আদর করিলেন। তিনি বলিলেন, ‘আমি সব জানি। যদিও আমার কাছে তোমরা আর দুর্যোধনেরা দুইই সমান, তথাপি ইহাদের ব্যবহার দেখিয়া এখন আমি তোমাদিগকে অধিক ভালোবাসি, আর তোমাদের উপকারের জন্যই এখানে আসিয়াছি। আমি আবার না আসা পর্যন্ত তোমরা ঐ নিকটের নগরটিতে গিয়া বাস কর৷’

 এই বলিয়া ব্যাস পাণ্ডবদিগকে একচক্রা নামক একটি নগরে পৌঁছাইয়া দিয়া, কুন্তীকে বলিলেন, ‘মা, আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতেছি, তোমার পুত্রেরা সমস্ত পৃথিবী জয় করিয়া পরম সুখে দিন কাটাইবে।’

 ব্যাস তাহাদিগকে এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে রাখিয়া চলিয়া গেলেন। এক মাস পরে তাঁহার ফিরিয়া আসিবার কথা রহিল৷

 সেই ব্রাহ্মণের বাড়িতে পাণ্ডবেরা বাস করিতে লাগিলেন। দিনেরবেলা পাঁচ ভাই ভিক্ষা করিয়া আর নানা স্থান দেখিয়া বেড়ান। সন্ধ্যা হইলে মায়ের কাছে ফিরিয়া আসেন। ভিক্ষার জিনিসগুলির সমান দুই ভাগ হয়। ইহার এক ভাগের সমস্তই ভীম খান, অপর ভাগ আর পাঁচজনে বাঁটিয়া খান। এইরূপে দিন যায়৷