পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

আজ আমার পালা। আমার টাকা নাই যে একজন মানুষ কিনিয়া পাঠাইব। আপনার লোক কাহাকেই বা কেমন করিয়া পাঠাই! তাই মনে করিয়াছি, আমরা সকলে মিলিয়া তাহার কাছে গিয়া একেবারে সকল দুঃখ দূর করিব৷”

 কুন্তী বলিলেন, “ঠাকুর! আপনার কোনো চিন্তা নাই। আমার পাঁচ ছেলের একটি আজ রাক্ষসের নিকট যাইবে।”

 ব্রাহ্মণ কহিলেন, “তাহা কি হয় মা? আপনারা একে ব্রাহ্মণ[১], তাহাতে অতিথি। আপনাদিগকে কিছুতেই আমি রাক্ষসের কাছে যাইতে দিব না৷”

 কুন্তী বলিলেন, “আপনার ভয় কি? রাক্ষস আমার ছেলের কিছুই করিতে পারিবে না। সে আরো বড় বড় রাক্ষস মারিয়াছে। কিন্তু ঠাকুর এ কথা কাহাকেও বলিবেন না। তাহা হইলে লোকে খামখা আসিয়া আমার ছেলেদিগকে কুস্তি শিখাইবার জন্য বিরক্ত করিবে৷”

 ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী যেন হাতে স্বর্গ পাইলেন। কুন্তীর প্রতি তাহাদের কিরকম ভক্তি হইল বুঝিতেই পার। এদিকে কুন্তী আসিয়া ভীমকে সকল কথা বলাতে ভীম উৎসাহের সহিত রাক্ষসের নিকট যাইতে প্রস্তুত হইলেন৷

 যুধিষ্ঠির ভিক্ষা হইতে ফিরিয়া আসিয়া প্রথমে এই সংবাদে বড় ভয় পাইলেন। তিনি বলিলেন, “মা! তুমি কি পাগল হইয়াছ যে, ভীমকে এমন কাজে পাঠাইতে রাজি হইলে? ভীমের যদি কিছু হয়, তবে আমাদের কি দশা হইবে?”

কুন্তী বলিলেন, “ভীমের গায় দশ হাজার হাতির জোর। সে যে-সকল কাজ করিয়াছে তাহা দেখ নাই? এসব কথা জানিয়া শুনিয়াও ব্রাহ্মণের উপকার না করা ভালো বোধ হয় না৷”

 তখন যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মা তুমি ঠিক বলিয়াছ, ভীমের যাওয়াই উচিত৷”

 পরদিন ভোরে ভীম রাক্ষসের খাবার লইয়া বনে গিয়াছেন। সেখানে গিয়া তিনি ডাকিতে লাগিলেন, “কোথায় হে! বক কাহার নাম?”“ও বক! খাবে নাকি এসো গো!” ডাকিতেছে, আর এদিকে নিজেই ভাত খাইয়া শেষ করিতেছেন। ডাক শুনিয়া রাক্ষস দাঁত কড়মড় করিতে করিতে হাজির! কি বিকট চেহারা! এক কান হইতে আর এক কান পর্যন্ত তাহার খালি দাঁত!

 একেই তো রাগিয়া আসিয়াছে, তাহার উপর আবার আসিয়া দেখে ভীম তাহার ভাত প্রায় শেষ করিয়াছে। কাজেই বুঝিতেই পার। সে গর্জন করিয়া বলিল, “মোর ভাতটি খাইছিস্? তোকে যোম ঘর পেঠ্‌ঠাইব নি?”

 কিন্তু তাহার কথা কে শোনে? ভীম খালি হাসেন আর খান। রাক্ষস হাত তুলিয়া ভয়ানক শব্দে ভীমকে মারিতে চলিল। ভীম তখনো হাসেন আর খান। রাক্ষস দুই হাতে ধাই ধাই করিয়া প্রাণপণে তাঁহার পিঠে চাপড় মারিতে লাগিল। তিনি তবুও খালি হাসেন আর খান! তখন রাক্ষস এক প্রকাণ্ড গাছ তুলিয়া লইয়া ভীমকে মারিতে আসল। ততক্ষণে ভীমেরও ভাত কয়টি শেষ হইয়াছে। তখন তিনি ধীরে-সুস্থে হাত মুখ ধুইয়া, হাসিতে হাসিতে রাক্ষসের হাত হইতে গাছ কাড়িয়া লইলেন। তারপর দুজনের ঘোরতর যুদ্ধ উপস্থিত হইল। যুদ্ধ

  1. পাণ্ডবদিগের কিনা তপস্বীর বেশ ছিল, তাই ব্রাহ্মণ ইহাদিগকে ব্রাহ্মণ মনে করিয়াছিলেন। আসলে ইহরা যে ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ নহেন, তাহা তো জানই৷