করিতে করিতে যখন আর গাছ রহিল না, তখন আরম্ভ হইল কুস্তি। দিন গেল, রাত্রিও যায়-যায়, তবু যুদ্ধ চলিয়াছে৷
এইরূপে ক্রমে রাক্ষসকে কাবু করিয়া, শেষে ভীম তাহাকে মাটিতে আছড়াইয়া ফেলিলেন। তারপর তাহার পিঠে হাঁটু দিয়া, গলা আর কোমরের কাপড় ধরিয়া এমনি বিষম টান দিলেন যে, সেই টানেই তাহার মেরুদণ্ড একেবারে দুইখান! তখনই চিৎকার আর রক্তবমি করিতে করিতে রাক্ষস মরিয়া গেল৷
বকের চিৎকারে তাহার লোকজন সব ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছুটিয়া আসিয়াছিল। ভীম তাহাদিগকে বলিলেন, “খবরদার! আর মানুষ খাইতে পাইবি না। তাহা হইলে তোদের এমনি দশা করিব!”
তাহারা বলিল, “ওরে বাবাগো! মোরা আর কখ্খনু মান্নুস খাবো নি”৷
তখন হইতে উহারা ভদ্রলোক হইয়া গেল, আর মানুষ খায় না৷
এদিকে ভীম রাক্ষস মারিয়া চুপিচুপি চলিয়া আসিয়াছে। সকালবেলা সকলে উঠিয়া দেখিল, রাক্ষস মরিয়া পাহাড়ের মতো পড়িয়া আছে। সংবাদ পাইয়া একচক্রার ছেলে বুড়ো পুরুষ মেয়ে সকলে ছুটিয়া তাহা দেখিতে আসিল। কিন্তু এমন ভয়ানক কাজ কাহার? সকলে বলিল, “দেখ কাল কাহার পালা গিয়াছে।”
পালা সেই ব্রাহ্মণের, আর কাহার হইবে? সকলে মিলিয়া ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করিল, “বলুন তো ঠাকুর, কিরকম হইয়াছিল।”
ব্রাহ্মণ বলিলেন, “ঠিক কিরকমটি হইয়াছিল, তাহা তো জানি না। আমরা কান্নাকাটি করিতেছিলাম, এমন সময় এক মহাপুরুষ আসিয়া দয়া করিয়া আমাদিগকে বলিলেন, ‘তোমাদের কোনো ভয় নাই, আমিই রাক্ষসের কাছে যাইব।’ বোধহয় সেই মহাপুরুষ রাক্ষস মারিয়া থাকিবেন৷”
এ কথায় সকলে অতিশয় আহ্লাদের সহিত নিজ নিজ ঘরে গিয়া দেবতার পূজা দিতে লাগিল৷
ইহার কয়েকদিন পরে এক ব্রাহ্মণ পাণ্ডবদিগের ঘরে আসিয়া রাত্রিতে থাকিবার জন্য একটু জায়গা চাহিলেন। ব্রাহ্মণটি অনেক দেশ দেখিয়া আসিয়াছে। পাণ্ডবদিগের যত্নে তুষ্ট হইয়া তিনি সেই সকল দেশের অনেক আশ্চর্য কথা তাঁহাদিগতে শুনাইতে লাগিলেন। সেই ব্রাহ্মণের নিকট তাঁহারা জানিতে পারিলেন যে, শীঘ্রই পাঞ্চাল দেশের রাজা দ্রুপদের মেয়ে কৃষ্ণার স্বয়ম্বর হইবে৷
কৃষ্ণার কথা অতি সুন্দর। দ্রুপদ রাজার কথা তো আগেই শুনিয়াছ দ্রোণের নিকট তিনি কেমন সাজা পাইয়াছিলেন তাহাও জান। সে সময়ে মুখে তিনি দ্রোণের সহিত বন্ধুতা করেন, কিন্তু মনে মনে সেই অবধি দ্রোণকে মারিবার উপায় খুঁজিতে থাকেন৷
দ্রোণকে মারা যে সহজ কথা নহে, আর যুদ্ধ করিয়াও তাঁহাকে মারা যে একেবারেই অসম্ভব, এ কথা দ্রুপদের বুঝিতে বিলম্ব হইল না। তাই তিনি স্থির করিলেন যে, কোনো মুনিকে ধরিয়া ইহার উপায় করিতে হইবে৷
কল্মাষী নদীর ধারে অনেক মুনি তপস্যা করেন। সেইখানে খুঁজিতে খুঁজিতে দ্রুপদ যাজ আর উপযাজ নামক দুই ভাইকে দেখিতে পাইলেন। তাঁহারা বড়ই ধার্মিক আর উঁহাদেরউপেন্দ্র—২৫