এইরূপ দেখিয়া শুনিয়া ধৃষ্টদ্যুম্ন ও তাহার দলের লোক চলিয়া আসিলেন৷
এদিকে দ্রুপদ যারপরনাই ব্যস্ত হইয়া আছে। ধৃষ্টদ্যুম্ন আসিতেই তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি দেখিলে বাবা? আমাদের কৃষ্ণা কাহার হাতে পড়িল? সে লোকটি কি অর্জুন হইবে? আহা! কৃষ্ণা আমার কোনো ছোটলোকের হাতে পড়ে নাই তো?”
ধৃষ্টদ্যুম্ন বলিলেন, “বাবা! কোনো চিন্তা করিবেন না। কৃষ্ণা যে সে লোকের হাতে পড়ে নাই। উহারা নিশ্চয় ক্ষত্রিয় আর খুবই বড়লোক হইবেন, তাহাতে ভুল নাই। শুনিয়াছি পাণ্ডবেরা নাকি সেই আগুনে পোড়া হইতে রক্ষা পাইয়াছে। আমার মনে হয় ইঁহারাই পাণ্ডব!”
আহা! কি আনন্দের কথা! ইঁহারা কি তবে পাণ্ডব? যাহা হউক ইহাদিগকে উচিত আদর দেখাইতে হইবে। তখনই রাজপুরোহিত ছুটিয়া সেই কুমারের বাড়িতে চলিলেন। সেখানে আসিয়া যখন যুধিষ্ঠিরের নিকট সকল কথাই জানিতে পারিলেন, তখন তাঁহার আনন্দ দেখে কে!
ইহার মধ্যে রাজবাড়ি হইতে সোনার রথ লইয়া লোক উপস্থিত। সেই রথে চড়িয়া সকলে রাজবাড়ি আসিলেন। সেখানে কতরকম জিনিস দিয়া যে তাঁহাদিগকে আদর করা হইল, তাহার সীমা নাই। আর আহারের আয়োজনের কথা কি বলিব? তেমন মিঠাই সন্দেশ আমি কখনো দেখি নাই। পাণ্ডবেরা দামী পোশাক পরিয়া সোনার থালায় সেই-সকল মিষ্টান্ন আহার করিলেন। যে সকল জিনিস তাঁহাদিগকে দেওয়া হইয়াছিল, তাহার মধ্যে অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া আর কিছু তাঁহারা লইলেন না। ইহাতে নিশ্চয় বুঝা গেল যে ইহারা ক্ষত্রিয়, তথাপি দ্রুপদ তাঁহাদিগকে বিনয় করিয়া বলিলেন, “আপনারা কে, আমরা তাহা জানি না। আপনারা নিজের পরিচয় দিয়া আমাদিগকে সুখী করুন৷”
এ কথায় উত্তরে যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মহারাজ! আপনি কোনো চিন্তা করিবেন না। আমরা ক্ষত্রিয়, মহাত্মা পাণ্ডুর পুত্র। কুন্তীদেবী আমাদের মাতা। আমি সকলের বড়, আমার নাম যুধিষ্ঠির। ইহার নাম ভীম। ইনি অর্জুন, যিনি লক্ষ্য বিঁধিয়াছিলেন। মা আর দ্রৌপদীর সঙ্গে যে দুটি আছে, তাঁহাদের নাম নকুল আর সহদেব৷”
যুধিষ্ঠিরের কথা শুনিয়া দ্রুপদ আহ্লাদে কিছুকাল কথা কহিতে পারিলেন না। তারপর কথাবার্তায় সকল ঘটনা জানিতে পারিয়া ধৃতরাষ্ট্রের নিন্দা করিতে করিতে বলিলেন, “তোমাদেব রাজ্য নিশ্চয় তোমাদিগকে লইয়া দিব!”
তারপর বিবাহের কথা। পাঁচ ভাই মিলিয়া দ্রৌপদীকে বিবাহ করিবেন শুনিয়া তো সকলে অবাক। এমন কথা তো কখনো শুনে নাই। এও কি হয়?
সকলে এইরূপ কথাবার্তা কহিতেছে, এমন সময় ব্যাসদেব সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ব্যাসদেব সকল কথা শুনিয়া বলিলেন, “তোমরা কেন ব্যস্ত হইয়াছ? এ কাজে কোনো মুস্কিলই নাই। দ্রৌপদীর সহিত যে ইহাদের বিবাহ হইবে, ইহা তো শিব অনেকদিন আগেই বলিয়া রাখিয়াছে। আর-এক জন্মে দ্রৌপদী এক মুনির কন্যা ছিলেন। যাহাতে খুব গুণবান লোকের সহিত তাহার বিবাহ হয়, এই জন্য সেই কন্যা শিবের তপস্যা করেন। শেষে যখন শিব বর দিতে আসিলেন, তখন কন্যা ব্যস্ত হইয়া ক্রমাগত পাঁচবার বলিলেন, ‘সকল গুণ যাঁহার আছে, এমন লোকের সহিত আমার বিবাহ হউক৷’ শিব বলিলেন, ‘তুমি পাঁচবারউপেন্দ্র—২৬