পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সহিত কথাবার্তা কহিবার সময় কখনো আর-একজন গিয়া তাহাতে বাধা দিতেন না। এমনকি, তাঁহাদের নিয়ম ছিল যে, যদি তাঁহাদের কেহ এরূপ অভদ্রতা করেন, তবে তাঁহাকে বারো বৎসর সন্ন্যাসী হইয়া বনে বাস করিতে হইবে৷

 ইহার মধ্যে একদিন এক ব্রাহ্মণের গোরু চোরে লইয়া গিয়াছে। ব্রাহ্মণ তো খাণ্ডবপ্রস্থে আসিয়া মহাকান্না জুড়িয়াছে, ‘হে পাণ্ডবগণ! আমার গোরু চোরে লইয়া গেল! হায় হায়! আমার গোরু চোরে সইয়া গেল!’

 ব্রাহ্মণের কান্না শুনিয়া অর্জুন বলিলেন, ‘ভয় নাই ঠাকুর! এই আমি চোরকে সাজা দিতেছি৷’

 এই বলিয়া তিনি অস্ত্র আনিতে ছুটিয়া চলিয়াছে, এমন সময় তাঁহার মনে হইল যে, অস্ত্রের ঘরে দ্রৌপদী আর যুধিষ্ঠির কথাবার্তা কহিতেছেন। তখন অর্জুন ভাবিলেন যে, ‘এখন গিয়া ইঁহাদের কথাবার্তায় বাধা দিলে অভদ্রতা হইবে, আর বারো বৎসরের জন্য বনে যাইতে হইবে বটে, কিন্তু চোখের সামনে ব্রাহ্মণের গোরু চোরে লইয়া যাইতেছে, ইহা সহ্য হইবার নহে। বরং বনেই যাইব, তথাপি ব্রাহ্মণের গোরু চোরে নিতে দিব না৷’

 এই মনে করিয়া তিনি অস্ত্র লইয়া চোর ধরিতে বাহির হইলেন। চোরকে মারিয়া ব্রাহ্মণের গোরু আনিয়া দিতে তাঁহার বেশি বিলম্ব হইল না। ব্রাহ্মণ গোরু পাইয়া চিৎকারপূর্বক অর্জুনকে প্রশংসা আর আশীর্বাদ করিতে করিতে ঘরে ফিরিলেন৷

 তারপর অর্জুন যুধিষ্ঠিরের নিকট গিয়া বলিলেন, ‘দাদা, নিয়ম যে ভাঙ্গিল! এখন অনুমতি করুন, বনে যাই৷’

 যুধিষ্ঠির তো শুনিয়াই অবাক! তাঁহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। তিনি বলিলেন, ‘সে কি ভাই, তোমার তো কিছুমাত্র অভদ্রতা হয় নাই। আর তুমি ব্রাহ্মণের কাজ করিতে গিয়াছিলে, সুতরাং একটা নিয়ম থাকিলেও তোমার না গেলেই দোষ হইত। আমি তো তোমার দাদা, আমার কথা তো মান্য কর, আমি বলিতেছি তোমার বনে যাওয়ার দরকার নাই। লক্ষ্মী ভাই! তুমি কোনো চিন্তা করিও না৷’

 অর্জুন বলিলেন, ‘দাদা আপনিই তো কহিয়াছে, মিথ্যা বলিয়া ধর্মকর্মও করিবে না। নিয়ম করিয়া তাহা ভাঙ্গিলে অন্যায় কাজ করা হইবে, আমি অস্ত্র ছুঁইয়া বলিতেছি, আমি তাহা পারিব না৷’

 কাজেই যুধিষ্ঠির আর বিদায় না দিয়া থাকিতে পারিলেন না। অর্জুন তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া বারো বৎসরের জন্য বনে চলিয়া গেলেন৷

 অৰ্জুন বনে থাকার সময় অনেক আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়াছিল। একদিন তিনি গঙ্গায় নামিয়া স্নান করিতেছেন, এমন সময় নাগরাজ কৌরবের কন্যা উলুপী তাঁহাকে ধরিয়া জলের ভিতর দিয়া একেবারে তাঁহাদের দেশে (অর্থাৎ পাতালে) নিয়া উপস্থিত করেন। তারপর যতক্ষণ অর্জুন উলুপীকে বিবাহ করিতে রাজি হন, ততক্ষণ তিনি তাঁহাকে আসিতে দেন নাই৷

 ইহার কিছুদিন পরে অর্জুন মণিপুর[১] যান, আর সেখানকার রাজার কন্যা চিত্রাঙ্গদার সহিত তাহার বিবাহ হয়৷

 ইহার পরে অর্জুন গঙ্গার ধারে আসিয়া পাঁচটি তীর্থ দেখিতে পাইলেন। তীর্থগুলি খুব

  1. এই মণিপুর উড়িষ্যার কাছে ছিল৷