পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সুতরাং স্থির হইল যে, যুধিষ্ঠিরের অনুমতি পাইলে অর্জুন সুভদ্রাকে জোর করিয়া বিবাহ করিবেন৷

 যুধিষ্ঠিরের অনুমতি সহজেই পাওয়া গেল, এখন বিবাহ হইলেই হয়। এ বিষয়ের সকল কথা কৃষ্ণ আর অর্জুন দুজনে ঠিক করিলেন, দ্বারকার আর কেহ জানিতে পারিল না৷

 ইহার মধ্যে একদিন সুভদ্রা রৈবতক পর্বতে দেবতার পূজা করিতে গিয়াছে। অর্জুন দেখিলেন এই তাঁহার সুযোগ। তিনি তাড়াতাড়ি যুদ্ধের বেশে অস্ত্র-শস্ত্র হাতে সুন্দর রথে চড়িয়া সেইখানে গিয়া উপস্থিত হইলেন৷

 সুভদ্রার পূজা-অর্চনা শেষ হইয়াছে, এখন দ্বারকায় ফিরিতে হইবে, এমন সময় অর্জুন আসিয়া তাঁহাকে রথে তুলিয়া দে ছুট। সঙ্গের লোকেরা তখন মহাকোলাহল আরম্ভ করিয়া দিল। কেহ দ্বারকায় সংবাদ দিতে যায়, কেহ প্রহরীদিগকে ডাকে, আর সকলে খালি হাউ-মাউ আর ছুটাছুটি করে!

 এদিকে দ্বারকার বড়বড় বীরেরা রাগে অস্থির। ‘এত বড় আস্পর্ধা! আমাদিগের এমন অপমান?’ এই বলিয়া তাঁহারা সকলে বর্ম-চর্ম লইয়া রথ সাজাইয়া প্রস্তুত! বলরাম তো এতই রাগিয়াছে যে, সেইদিনেই-বা সকল কৌরব মারিয়া শেষ করেন৷

 এমন সময় কৃষ্ণ বলিলেন, ‘তোমরা যে চটিয়াছ, বল দেখি অর্জুনের কি দোষ? ক্ষত্রিয়েরা তো এইরূপ বিবাহকেই খুব ভালো বিবাহ মনে করে, অর্জুন তাহাই করিয়াছেন। অর্জুন সুভদ্রাকে বিবাহ করিবেন ইহা আমাদের পক্ষে নিতান্ত সুখেরই কথা। আর তিনি বীরপুরুষ, সুতরাং জোর দেখানো তাঁহার মতো লোকের উপযুক্ত কাজই হইয়াছে। তোমরা যে ইহাতে অপমান মনে করিতেছ অপমান কিসে হইবে, জান? যদি অর্জুন সুভদ্রাকে লইয়া দেশে চলিয়া যায়, তবেই অপমান। আর সে কেমন বীর, তাহাও তো জান। জোর করিয়া তাহাকে কিছুতেই আটকাইতে পারিবে না। আমার কথা যদি শুন, তবে এই বেলা তাঁহাকে মিষ্ট কথায় খুশি করিয়া ফিরাও। তাহাকে ঘরে আনিয়া আদর করিয়া বিবাহ দাও। তাহা হইলে আর অপমানের কথা থাকিবে না, আনন্দের কথা হইবে৷

 কৃষ্ণের কথায় যাদবেরা[১] তাড়াতাড়ি অর্জুনকে মিষ্ট কথায় ডাকিয়া ফিরাইলেন। তারপর ধুমধামের সহিত তাঁহার আর সুভদ্রার বিবাহ হইল৷

 বিবাহের পর অর্জুন দ্বারকা হইতে পুরুষতীর্থে যান। এইরূপে ক্রমে তাঁহার বারো বৎসর বনবাস শেষ হওয়াতে তিনি সুভদ্রা এবং কৃষ্ণ, বলরাম প্রভৃতিকে সঙ্গে লইয়া খাণ্ডবপ্রন্থে চলিয়া আসিলেন। সেখানে কয়েকদিন খুব আনন্দেই কাটিল। তারপর কৃষ্ণ ছাড়া যাদবদিগের আর সকলে চলিয়া গেলেন৷

 ইহার পর একদিন কৃষ্ণ আর অর্জুন, দ্রৌপদী, সুভদ্রা প্রভৃতিকে লইয়া যমুনার ধারে বেড়াইতে যান। সেখানে সকলেই আমোদ-প্রমোদ করিতেছে দেখিয়া কৃষ্ণ আর অর্জুন খানিক দূরে একটি নির্জন স্থানে বসিয়া কথাবার্তা কহিতে লাগিলেন৷

 এমন সময় জটাধারী (অর্থাৎ মাথায় জটা আর গাছের ছাল পরা) আর পিঙ্গল বর্ণের দাড়ি-গোঁফওয়ালা এই লম্বা এক ব্রাহ্মণ তাঁহাদের সামনে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহার

  1. অর্থাৎ কৃষ্ণ যে বংশে জন্মিয়াছেন সেই বংশের লোকেরা; ইহাদের পূর্বপুরুষের নাম ছিল যদু। তাই ইহারা সকলে যাদব৷