পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২২১

বিদুরকে বলিলেন, ‘শীঘ্র দ্রৌপদীকে লইয়া আইস, হতভাগী আমার চাকরানীদের সঙ্গে গিয়া ঘর ঝাঁট দিক।’

 বিদুর বলিলেন, ‘মুর্খ! তোমার যে মরিবার গতিক হইয়াছে, এ কথা না বুঝিতে পারিয়াই তুমি এরূপ বলিতেছ। এমন কথা নিতান্ত নীচ লোক ছাড়া আর কেহ বলে না৷’

 ইহাতে দুর্যোধন বিদুরকে গালি দিয়া একটা দরোয়ানকে বলিলেন। তুই দ্রৌপদীকে লইয়া আয়! তোর কোন ভয় নাই৷

 দরোয়ান দ্রৌপদীর নিকট গিয়া বলিল, ‘যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় আপনাকে দুর্যোধনের নিকট হারিয়াছে। আপনি আমার সঙ্গে চলুন, ধৃতরাষ্ট্রে ঘর ঝাঁট দিতে হইবে৷’

 এ কথায় দ্রৌপদী আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, ‘তুই একি পাগলের মতো কথা বলিতেছিস! রাজারা কি স্ত্রীকে পণ রাখিয়া খেলা করে? যুধিষ্ঠিরের কি আর জিনিস ছিল না?

 দরোয়ান বলিল, ‘যুধিষ্ঠির আগে ধনদৌলত, তারপর ভাইদিগকে, তারপর নিজেকে হারিয়া, শেষে আপনাকে হারিয়াছেন৷’

 দ্রৌপদী বলিলেন, ‘তুই সভায় গিয়া যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা কর, তিনি আগে নিজেকে, কি আমাকে হারিয়াছেন৷’

 দারোয়ান আবার সভায় আসিয়া যুধিষ্ঠিবকে বলিল, ‘দ্রৌপদী আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন যে, আপনি কাহাকে আগে হরিয়াছেন? আপনার নিজেকে, না দ্রৌপদীকে?’

 যুধিষ্ঠির চুপ করিয়া রহিলে, এ কথার কোন উত্তর দিলেন না। তখন দুর্যোধন বলিলেন, ‘দ্রৌপদীর কিছু জিজ্ঞাসা করিবার থাকে, এখানে আসিয়া করুক৷’

 দারোয়ান নিতান্ত দুঃখিত হইয়া আবার দ্রৌপদীর নিকট গিয়া বলিল, “মা! এবার দেখিতেছি কৌরবদের সর্বনাশ হইবে। দুষ্ট দুর্যোধন আপনাকে সভায় ডাকিয়াছেন৷”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “বাছা, ভগবানই সব করেন। এ সময়ে আমি যেন ধর্ম রাখিয়া চলিতে পারি। তুমি আর একটিবার সভায় গিয়া ধার্মিক গুরুজনদিগকে জিজ্ঞাসা কর, এখন আমার কি করা উচিত। তাঁহারা যাহা বলিবেন, আমি তাহাই করিব৷”

 দারোয়ান সভায় দ্রৌপদীর কথা বলিলে, সকলে মাথা হেঁট করিয়া রহিলেন। দুর্যোধনের ভয়ে কাহারো মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না। সেই দুষ্ট আবার বলিল, “তুই দ্রৌপদীকে এখানে লইয়া আয়৷”

 দরোয়ান দুর্যোধনের চাকর, তথাপি সে তাঁহার কথায় কান না দিয়া আবার সকলকে জিজ্ঞাসা করিল, “আমি দ্রৌপদীকে কি বলিব?”

 তখন দুর্যোধন বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “এ বেটা দেখিতেছি বড়ই ভীতুঃ দুঃশাসন, তুমি গিয়া দ্রৌপদীকে লইয়া আইস৷”

 বলিবামাত্র সেই দুষ্ট দুই চোখ লাল করিয়া দ্রৌপদীর নিকট গিয়া বলিল, “আমরা তোমাকে জিতিয়াছি। চল! সভায় চল!"

 দুঃশাসনের ভাবগতিক দেখিয়া দ্রৌপদী ভয়ে তাড়াতাড়ি গান্ধারী প্রভৃতির নিকট আশ্রয় সইতে গেলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছিবার পূর্বেই দুরাত্মা তাঁহার চুলের মুঠি ধরিয়া টানিতে টানিতে তাঁহাকে সভায় লইয়া চলিল। তিনি ভয়ে কাঁপতে কাঁপিতে কত মিনতি করিয়া বলিলেন, “দুঃশাসন, তুমি আমাকে এমন করিয়া সভায় লইয়া যাইও না!” কিন্তু হায়। সে