পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 বিরাট এই-সকল দুষ্ট লোককে বড়ই ভয় করিতেন, সুতরাং তিনি উহাদের কথায় রাজি হইলেন৷

 হায় হায়! যাঁহার পায়ের ধূলা পাইলে লোকে আপনাকে ধন্য মনে করিতে, দেবতারা পর্যন্ত যাঁহাকে সম্মান দিয়া চলিতেন, সেই দ্রৌপদী দেবীর কপালে কিনা এতই দুঃখ আর অপমান ছিল! দুরাত্মারা তাঁহাকে কীচকের সঙ্গে শ্মশানে লইয়া চলিল, একটি লোকও তাহাদিগকে বারণ করিল না। দ্রৌপদী কেবল এই বলিয়া কাঁদিতে লাগিলেন, “হে জয়, জয়ন্ত, বিজয়, জয়সেন, জয়দ্বল তোমরা কোথায়? আমাকে রক্ষা কর!”

 ভীম তাঁহার ভয়ানক কার্য শেষ করিয়া সবে গিয়া একটু নিদ্রার আয়োজন করিতেছে, এমন সময় দ্রৌপদীর সেই কান্না তাঁহার কানে গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ তাড়াতাড়ি পোশাক বদলাইয়া একটা গোপনীয় পথে শ্মশানে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে দশ ব্যাম (পয়ত্রিশ হাত, সাড়ে তিন হাতে এক ব্যাম) লম্বা প্রকাণ্ড একটা গাছ ছিল, সেই গাছ তুলিয়া লইয়া তিনি যখন ঘোরতর গর্জনে সেই দুরাত্মাদিগকে তাড়া করিলেন, তখন তাঁহাকে নিতান্তই ভয়ংকর দেখা গিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহারা তাঁহাকে দেখিবামাত্রই “বাবা গো, ঐ গন্ধর্ব আসিতেছে!” বলিয়া দ্রৌপদীকে ফেলিয়া ঊৰ্দ্ধশ্বসে পলাইতে লাগিল। কিন্তু পলাইয়া আর কদূর যাইবে? ভীম সেই গাছ দিয়া দেখিতে দেখিতে তাহাদের মাথা গুঁড়া করিয়া দিলেন। উহারা একশত পাঁচজন ছিল, তাহারা একটিও প্রাণ লইয়া ঘরে ফিবিতে পারিল না৷

 তারপর দ্রৌপদীকে শান্ত করিয়া ভীম পুনরায় ঘরে চলিয়া আসিলেন৷

 এদিকে দেশের সকল লোক গন্ধর্বের ভয়ে নিতান্তই ব্যস্ত হইয়া উঠিল। নিজে রাজা আসিয়া রানীকে বলিলেন, “এই মেয়েটি আমাদের এখানে থাকিলে তো বড়ই ভয়ের কথা দেখিতেছি। ইহাকে বল, সে অন্যত্র চলিয়া যাউক৷”

 দ্রৌপদী ঘরে ফিরিবামাত্রই সুদেষ্ণা তাঁহাকে এ কথা জানাইলেন। তাহা শুনিয়া দ্রৌপদী বলিলেন, “মা, আর তেরোটি দিন দয়া করিয়া অপেক্ষা করুন, তারপর আমি এখান হইতে চলিয়া যাইব। এই সময়ের মধ্যেই আমার স্বামিগণের দুঃখ দূর হইবে৷”

 দুঃখ দূর হওয়ার অর্থ বোধহয় বুঝিয়াছ। অর্থাৎ আর তেরো দিন গেলেই অজ্ঞাতবাসের এক বৎসর শেষ হইবে৷

 অজ্ঞাতবাসের সময় ফুরাইয়া আসিল। এতদিন দুর্যোধনের দলের লোকেরা কি করিতেছিলেন? তাঁহারা দেশ-বিদেশে লোক পাঠাইয়া প্রাণপণে পাণ্ডবদিগকে খুঁজিয়াছে, কিন্তু কোনোমতেই তাহাদের সন্ধান করিতে পারেন নাই! দূতেরা ফিরিয়া আসিয়া খালি এক থাই বলে, “মহারাজ, কত খুঁজিলাম, কোথাও পাণ্ডবদিগকে দেখিতে পাইলাম না৷”

 দূতগণের কথা শুনিয়া কৌরবেরা যারপরনাই চিন্তিত হইলেন। যাহা হউক, দূতেরা এই একটা ভালো সংবাদ আনিল যে বিরাটের সেনাপতি কীচক মারা গিয়াছে। এই কীচকের জন্য সকল রাজাই বিরাটকে ভয় করিয়া চলিতেন। দুর্যোধনের সভায় তখন ত্রিগর্ত দেশের রাজা সুশর্মা উপস্থিত ছিলেন। বিরাট কীচকের সাহায্যে এই সুশর্মাকে বার বার পরাজয় করাতে, ইহার মনে বিরাটের উপরে চিরকালই ভারি রাগ ছিল। এখন কীচক মারা যাওয়াতে সুশর্মা ভাবিলেন যে, সেইসকল পরাজয়ের শোধ সওয়ার উত্তম সুযোগ উপস্থিত। তাই তিনি, এই বেলা বিরাটের রাজ্য আক্রমণ করিয়া তাঁহার ধনরত্ন ও গোরুবাছুর কাড়িয়া