পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৫৭

 কাজেই অর্জুন পাইলেন কৃষ্ণকে, আর দুর্যোধন পাইলেন এক অর্বুদ সৈন্য। দুজনেই মনে করিলেন, আমি খুব জিতিয়াছি।

 সেখান হইতে দুর্যোধন বলরামের নিকট গেলেন। কিন্তু বলরাম বলিলেন, “আমি তোমাদের কাহাকেও সাহায্য করিব না, তোমরা প্রস্থান কর।”

 এদিকে কৃষ্ণ আর অর্জুন স্থির করিলেন যে যুদ্ধের সময় কৃষ্ণ অর্জুনের সারথি হইবেন।

 শল্য কি করিয়াছিলেন শুনিবে? সে হাসির কথা, শল্য পাণ্ডবদিগের মাতুল, মাদ্রীর ভাই। তিনি, পাণ্ডবদিগের সাহায্য করিবার জন্য, বিস্তর সৈন্য লইয়া তাহার রাজ্য মদ্রদেশ হইতে যাত্রা করিলেন। পথে দুর্যোধন, তাহাকে হাত করিবার জন্য, তাহার এতই সমাদর করিতে লাগিলেন যে, তাহাতে দেবতারও মন ভুলিয়া যায়। যেখানেই শল্য বিশ্রাম করিবেন, সেইখানেই দুর্যোধন চমৎকার একটি বৈঠকখানা করিয়া রাখিয়াছে। বৈঠকখানাগুলি দেখিয়া শল্য ভাবিলেন, ‘বাঃ। পাণ্ডবেরা আমার কতই যত্ন করিতেছে!’ এ যে দুর্যোধনের চাতুরি, তাহা তিনি বুঝিতেই পারিলেন না। একটা বৈঠকখানার কারুকার্য তাহার বড়ই ভালো লাগায়, তিনি বলিলেন, “ইহার কারিগরকে ডাক, বকশিস দিব।” অমনি নিজে দুর্যোধন কারিগর সাজিয়া আসিয়া উপস্থিত! শল্য তাহাকে বলিলেন, “কারিগর বল, তুমি কি পুরস্কার চাও? আমি তাহাই দিতেছি।”

 দুর্যোধন বলিলেন, “মামা। আপনার কথা যেন মিথ্যা না হয়। আমি এই চাই যে, আপনি আমার দলে আসিয়া সেনাপতি হউন।”

 সে-সকল লোক কথায় বড় খাঁটি ছিলেন। শল্যের আর পাণ্ডবদিগের সাহায্য করা হইল না। দুর্যোধনকে তিনি বলিলেন, “আচ্ছা তুমি ঘরে যাও, আমি যুধিষ্ঠিরের সহিত দেখা করিয়া আসিতেছি।”

 যুধিষ্ঠিরের সহিত দেখা হইলে, শল্য তাহাকে এই বলিয়া আশীর্বাদ করিলেন, “তোমাদের দুঃখেব শেষ হইযাছে, এখন তোমাদের শত্রুদিগকে মারিয়া সুখে রাজ্য কর।” তারপর পথে দুর্যোধনের ফাঁকিতে পড়িয়া যেসকল কথা বলিযা আসিয়াছে, তাহা জানাইলেন। সে কথায় যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মামা! আপনি আপনার কথা রাখিয়া ভালোই করিয়াছেন? কিন্তু আমাদের একটি উপকার করিতে হইবে। কর্ণ আর অর্জুনের যুদ্ধ উপস্থিত হইলে, আপনি কর্ণের সারথি হইয়া, এমন উপায় করিবেন, যাহাতে তাহার তেজ কমিয়া যায়।”

 শল্য বলিলেন, “সে বিষয়ে তোমরা কোনো চিন্তা করিও না। আমার যতদূর সাধ্য তোমাদের উপকার নিশ্চয় করিব।”

 এইরূপে বড় বড় বীরগণ ক্রমে দুই দলের সাহায্যার্থ উপস্থিত হইতে লাগিলেন।

 পাণ্ডবদিগের দলে প্রথমে আসিলেন সাত্যকি। ইনি অসাধারণ যোদ্ধা, কৃষ্ণের আত্মীয় এবং অর্জুনের ছাত্র ও বন্ধু। ইহার সঙ্গে এক অক্ষৌহিণী সৈন্য আসিল। তারপর চেদি দেশের রাজা মহাবীর ধৃষ্টকেতু এক অক্ষৌহিণী-সৈন্য লইয়া আসিলেন। তারপর মগধের রাজা জরাসন্ধের পুত্র জয়ৎসেন এক অক্ষৌহিণী সৈন্য লইয়া আসিলেন। তারপর মহাবীর পাণ্ড্য এক অক্ষৌহিণী সৈনা লইয়া আসিলেন।

 তারপর দ্রুপদ, বিরাট ইহারাও অনেক লক্ষ যোদ্ধা আর সৈন্যের জোগাড় করিলেন। এইরূপে পাণ্ডবদের পক্ষে সাত অক্ষৌহিণী সৈন্য হইল।

 উপেন্দ্র—৩৩