পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 আবার খানিক দূরে বাঘ বসে আছে বুড়িকে খাবে বলে। সে বুড়িকে দেখতে পেল না, খালি দেখলে একটা লাউ গড়িয়ে যাচ্ছে। সেটাকে নেড়ে-চেড়ে দেখলে, বুড়িও নয়, খাবার জিনিসও নয়। আর তার ভিতর থেকে সে যেন বলছে, ‘বুড়ি গেল ঢের দূর।’ শুনে সে ভাবলে বুড়ি চলে গিয়েছে। তখন সে ঘোঁৎ করে তাতে দিলে এক ধাক্কা, আর সেটা গাড়ির মতন গড়গড়িয়ে চলল।

 লাউ চলছে আর বুড়ি তার ভিতর থেকে বলছে—

লাউ গড়-গড়, লাউ গড়-গড়,
খাই চিঁড়ে আর তেঁতুল,
বীচি ফেলি টুল্-টুল্।
বুড়ি গেল ঢের দূর!

আবার খানিক দূরে সেই শিয়াল পথের মাঝখানে বসে আছে। সে লাউ দেখে বললে, ‘হুঁ! লাউ কিনা আবার কথা বলে। ওর ভিতর কি আছে দেখতে হবে।’ তখন সে হতভাগা লাথি মেরে লাউটা ভেঙেই বলে কিনা, ‘বুড়ি তোকে তো খাব!’

বুড়ি বললে ‘খাবি বইকি! নইলে এসেছি কি করতে? তা, আগে দুটো গান শুনবিনে?’

শিয়াল বললে, ‘হ্যাঁ, দুটো গান হলে মন্দ হয় না। আমিও একটু-আধটু গাইতে পারি।’

বুড়ি বললে, ‘তবে ভালোই হল। চল ঐ ঢিপিটায় উঠে গাইব এখন।’

বলে বুড়ি সেই ঢিপির উপরে উঠে সুর ধরে চেঁচিয়ে বললে, ‘আয়, আয় রঙ্গা-ভঙ্গা, তু-উ-উ-উ-উ!’

অমনি বুড়ির দুই কুকুর ছুটে এসে, একটা ধরলে শিয়ালের ঘাড়, আর একটায় ধরলে তার কোমর। ধরে টান কি টান! শিয়ালের ঘাড় ভেঙে গেল, কোমর ভেঙে গেল, জিভ বেরিয়ে গেল, প্রাণ বেরিয়ে গেল—তবু তারা টানছেই, টাইছেই, খালি টানছে।


উকুনে-বুড়ির কথা

এক যে ছিল উকুনে-বুড়ি, তার মাথায় বড্ড ভয়ানক উকুন ছিল। সে যখন তার বুড়োকে ভাত খেতে দিতে যেন তখন ঝরঝর করে সেই উকুন বুড়োর পাতে পড়ত। তাইতে সে একদিন রেগে গিয়ে, ঠাঁই করে বুড়িকে ঠেঙার বাড়ি মারলে। তখন বুড়ি ভাতের হাঁড়ি আছড়ে গুঁড়ো করে রাগের ভরে সেই যে নদীর ধার দিয়ে চলে গেল, আর তাকে বুড়ো ডেকে ফিরাতে পারলে না।

নদীর ধারে এক বক বসে ছিল, সে উকুনে-বুড়িকে দেখে বললে, ‘উকুনে-বুড়ি, কোথা যাস?’

উকুনে-বুড়ি বললে—

স্বামী মারলে, রাগে তাই
ঘর-গেরস্তী ফেলে যাই।