পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৮৩

মধ্যেই সে সকল হাতি মারিয়া ফেলাতে, অঙ্গদেশের ম্লেচ্ছ রাজা হাতি চড়িয়া দুর্যোধনকে সাহয্য করিতে আসেন। ইনি মরিলে আসেন ভগদত্ত।

 ভগদত্ত ইন্দ্রের বন্ধু এবং ভয়ানক যোদ্ধা ছিলেন, আর তদপেক্ষাও অতি ভয়ানক একটা হতিতে চড়িয়া আসিয়াছিলেন। ভীম এত হাতি মারিয়াছে, কিন্তু এ হাতিকে মারা দূরে থাকুক, বরং হাতিই তাহাকে শুড়ে জড়াইয়া, পায়ের নীচে ফেলিবার জোগাড় করিয়াছিল। অনেক কষ্টে শুঁড় ছড়াইয়া ভীম হাতির পায়ের তলায় গিয়া লুকাইয়াছিলেন, তাই রক্ষা। আর সকলে তো মনে করিয়াছিল, তাহাকে বুঝি মারিয়াই ফেলিয়াছে।

 এদিকে ভীমকে বাঁচাইবার জন্য যুধিষ্ঠির, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন অন্যান্য লোকের সহিত ভগদত্তের যুদ্ধ হইতে লাগিল। দশার্ণের রাজা ভগদত্তের হাতে মারা গেলেন। ভগদত্তের হাতি সাত্যকির রথখানিকে শুড় জড়াইয়া হুঁড়িয়া মারিলে সাত্যকি ও তাহার সারথি তাহা হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পলায়ন করিলেন। তারপর হাতিটি রাজামহাশয়দিগকে লইয়া লুফালুফি করিতে লাগিল।

 তখন না জানি কিরূপ কাণ্ড হইয়াছিল, আর সকলে কিরূপ চিৎকার করিয়াছিল। সে চীৎকার অর্জুনের কানে গিয়া উপস্থিত হইল। তাহা শুনিয়া তিনি বলিলেন, “ঐ বুঝি ভগদত্ত তাহার হাতি লইয়া সকলকে শেষ করিলেন। শীঘ্র ওখানে চলুন।”

 কিন্তু এদিকে আবার চৌদ্দহাজার সংশপ্তক আসিয়া উপস্থিত! অর্জুন ব্রহ্মাস্ত্রে তাহাদিগকে মারিয়া ফিরিতে চলিয়াছে, এমন সময় আবার সুশর্মা ছয় ভাই সমেত আসিয়া তাহাকে আক্রমণ করিলেন। যাহা হউক, সুশর্মার ভাইকে মারিয়া এবং তাহাকে অজ্ঞান করিয়া, চলিয়া আসিতে অর্জুনের অধিক সময় লাগিল না।

 এদিকে ভগদত্ত তাহার হাতি লইয়া পাণ্ডব সৈন্য শেষ করিতে ব্যস্ত, এমন সময় অর্জুন কৌরব সেনা মারিতে মারিতে সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তারপর দুজনে কি ভীষণ যুদ্ধই হইল। ভগদত্ত হাতির উপরে, অর্জুন রথের উপরে। অর্জুনের রথ তো আর যুদ্ধ করিতে জানে না, কিন্তু ভগদত্তের হাতিটি এক একবার ক্ষেপিয়া রথ গুঁড়া করিয়া দিতে আসে, কৃষ্ণ তখন অনেক কৌশলে পাশ কাটিয়া তাহাকে এড়ান।

 এমন সময় অর্জুন ভগদত্তের ধনুক ও তুণ কাটিয়া, তাহার গায়ে সত্তরটি বাণ বিধাইয়া দিলেন। তখন ভগদত্তও রাগে অস্থির হইয়া, বৈষ্ণব অঙ্কুশ’ নামক অস্ত্র অর্জুনের বুকের দিকে ছুঁড়িয়া মারিলেন। ইহা অতি ভয়ানক অস্ত্র। বিষ্ণু ইহা নরকাসুরকে দেন, নরকাসুর ভগদত্তকে দেয়। এ অস্ত্রের ঘা খাইলে ইন্দ্রেরও প্রাণ বাহির হইয়া যায়। একমাত্র বিষ্ণু ইহা সহ্য করিতে পারেন।

 তাই সে অস্ত্রকে অর্জুনের দিকে আসিতে দেখিয়া কৃষ্ণ (যিনি নিজেই বিষ্ণু) নিজের বুক পাতিয়া দিলেন। তাহার বুকে পড়িয়া তাহা একটি সুন্দর মালা হইয়া গেল।

 ইহাতে অর্জুন একটু বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “আপনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, যুদ্ধে যোগ দিবেন না। এখন সে প্রতিজ্ঞা কিজন্য ভাঙিলেন? আমি অস্ত্র বারণ করিতে পারিতাম না?”

 কৃষ্ণ তাহাকে সে অস্ত্রের কথা বুঝাইয়া দিয়া বলিলেন, “ভগদত্তের হাতে আর তাহা নাই। এখন তুমি উহাকে মার।”

 ইহার অল্পক্ষণ পরেই অর্জুন রাগে ভগদত্তের হাতিকে মারিয়া, অর্ধচন্দ্র বাণে ভগদত্তকেও